মনজুরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা টিভি, নড়াইল
খোশ আমদেদ মাহে রমজানুল মোবারক। শাবান মাসের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আকাশে একফালি বাঁকা চাঁদ উদিত হয়ে মুসলিম বিশ্বে আসে মহিমান্বিত মাস রমজান। রহমত, বরকত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে ধনী-গরিব, ছোট-বড়, আরব-অনারব সবার কাছে ফিরে আসে এই মাস। পবিত্র এ মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুমিন-মুসলমানরা তাদের ঈমানি চেতনাকে জাগ্রত করে এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নিবেদিত বান্দা হওয়ার মহান সুযোগ লাভ করে। আরবি বর্ষপঞ্জির নবম মাস— পবিত্র রমজানুল মোবারক। পবিত্র কোরআনের ভাষায় যাকে ‘রামাদান’ বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে- শাহরু রামাদানাল্লাজি উনজিলা ফি-হিল কোরআন [সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫]। ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান সাওম বা রোজা পালন। রজব, শাবান ও রমজান— এ তিনটি মাসই মূলত সিয়ামের মৌসুম। রজব ও শাবান মাস রমজানের প্রস্তুতির মাস। আর রমজান হচ্ছে অন্য সব মাসের সর্দার। ইবাদতের স্বর্ণমৌসুম।
পবিত্র রমজান মাসের প্রতিটি সেকেন্ড, প্রতিটি মুহূর্ত প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং রহমত ও বরকতমণ্ডিত। তাই পবিত্র এ মাসের আগমনকে স্বাগত জানাতে সবসময় প্রস্তুত থাকে মুমিন-মুসলমানের হূদয়। আকাশে রমজানের চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অন্তরে শুকরিয়া জ্ঞাপনের পাশাপাশি মুখে উচ্চারিত হয়- খোশ আমদেদ মাহে রমজানুল মোবারক। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) তার ‘এহয়াউল উলুম’ গ্রন্থে রহমতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘রোজাদার বান্দা যখন নিদ্রা যান, তখন তার প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসের বদৌলতে আল্লাহ তাসবিহ পাঠের প্রতিদান দান করেন। এ ছাড়া সাহরি, ইফতার, তারাবির নামাজ, তেলাওয়াতে কোরআন, তাসবিহ-তাহলিল এবং অপরাপর ইবাদত-বন্দেগিতেও সওয়াব অন্য মাসের চেয়ে ৭০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ [সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩]
রমজান মাসে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি, জিকির, কোরআন তেলাওয়াতের আমল জারি রাখা উচিত। সেই সঙ্গে গিবত, শেকায়েত, পরনিন্দা, পরচর্চা পরিহার করে চলতে হবে। কেননা এগুলো রোজার উদ্দেশ্যের পরিপন্থি কাজ। এক হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই রোজা নয়; বরং বেহুদা-অযাচিত কথাবার্তা থেকে বিরতও গুরুত্বপূর্ণ।’ যখন রমজান আসে, বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানকে শিকল পরিয়ে দেওয়া হয়। [বুখারি ও মুসলিম]
আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে আমাদের প্রথমে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। সব পাপ-গুনাহ থেকে তওবার মাধ্যমে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। সব ধরনের জুলুম-অন্যায় থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। যাদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। ভালো কাজের মাধ্যমে রমজানের দিবস-রজনী যাপনের মানসিকতা নিয়ে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে।