মনজুরুল ইসলাম,
মুক্তিযোদ্ধা টেলিভিশন
আল-আকসা মসজিদে অভিযান চালিয়েছে ইসরাইলি পুলিশ। চিকিৎসকরা বলেছেন, শুক্রবার ভোর হওয়ার আগেই এ ঘটনায় কমপক্ষে ১৫২ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। মসজিদের পরিচালক ইসলামিক এনডাউমেন্ট বলেছে যে, ইসরাইলি পুলিশ ভোর হওয়ার আগেই মসজিদে প্রবেশ করে। সেই সময় বহু মুসল্লি ফজর নামাজের জন্য মসজিদে জড়ো হয়।অনলাইনে প্রচারিত ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিরা পাথর ছুড়ছে এবং পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছুড়ছে। এসময় পুলিশের সাথে অনেক ইহুদী চরমপন্থীকে অভিযানে অংশ নিতে দেখা যায়। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে, তারা কমপক্ষে ১৫২ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এনডাউমেন্ট জানায়, মসজিদের একজন প্রহরীর চোখে রাবার বুলেট দিয়ে গুলি করা হয়।
ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্টের মতে, ইসরাইলি বাহিনী অ্যাম্বুলেন্স এবং প্যারামেডিকদের মসজিদে পৌঁছাতে বাধা দেয়। ফিলিস্তিন মিডিয়া জানিয়েছে, বহু আহত মানুষ কম্পাউন্ডের ভিতরে আটকা পড়ে। ইসরাইলি পুলিশ জানিয়েছে, তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছিল, একটি ‘হিংসাত্মক’ ভিড় ভাঙতে যারা ফজর নামাজ শেষে মসজিদে থেকে যায়। তারা বলে, ফিলিস্তিনিদের একটি দল মসজিদের পশ্চিম দিকে পাঁচিলের কাছে থাকা ইহুদি প্রার্থনাস্থলের দিকে ঢিল ছুড়তে শুরু করার পরে তারা ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করতে মসজিদে প্রবেশ করে। স্থানীয় মানুষ জানিয়েছেন, ইসরাইলি পুলিশ বাহিনী কোনো কারণ ছাড়াই আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে হামলা চালিয়েছে এবং ফজর নামাজের পরে মুসল্লিদের ওপর হামলা করেছে।
রমজান মাস চলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি জুমআর নামাজের জন্য আল-আকসায় জড়ো হবে বলে মনে করা হয়েছিল। গত বছর রমজানের সময় আল-আকসায় সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভ এবং অভিযান অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ১১ দিনের হামলায় পরিণত হয়। সেই যুদ্ধের ফলে কমপক্ষে ২৩২ ফিলিস্তিনি এবং ১২ জন ইসরাইলি নিহত হয়। এছাড়াও দরিদ্র এ অঞ্চলে বহু জিনিস ধ্বংস করা হয়।
এ বছর রমজান, ইহুদিদের পাসওভার ছুটি এবং খ্রিস্টানদের পবিত্র সপ্তাহের সঙ্গে একই সময় হচ্ছে। এর ফলে হাজার হাজার তীর্থযাত্রী এবং অন্যান্য দর্শনার্থীদের জেরুজালেমে আসার কথা রয়েছে।
ইসরাইলি সেনার গুলিতে ৫ ফিলিস্তিনি নিহত
এদিকে ইসরাইল অধিকৃত পশ্চিম তীরে সেনাদের গুলিতে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে পাঁচে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিম তীরে ইসরাইল সশস্ত্র বাহিনীর অব্যাহত অভিযানে তারা নিহত হন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে ২০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানে দুই ফিলিস্তিনি নিহত হন। বুধবার অপর তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়। বুধবার সন্ধ্যায় ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। তাদের দাবি, সেনাদের লক্ষ্য করে পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করে ওই কিশোর। তখন সেনারা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বুধবার রামাল্লার কাছে ইসরাইল বাহিনী এক গ্রেফতার অভিযান চালালে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় এক ফিলিস্তিনি নিহত হন। তাৎক্ষণিক এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বা পুলিশ। এক ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরাইলি সাঁজোয়া যানগুলোতে একদল ফিলিস্তিনি পাথর নিক্ষেপ করছিল। থেমে থেমে গুলির শব্দও শোনা যায়।
ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেত জানিয়েছে, অভিযানে তিন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা ইসরাইলিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। সামরিক বাহিনী ও পুলিশের বিবৃতি অনুযায়ী, বুধবারের অভিযানে ‘সন্ত্রাসী’ সন্দেহে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। এর আগে মুহাম্মদ হাসান মুহাম্মদ আসাফ নামের ৩৪ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি আইনজীবীও ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর গুলিতে নিহত হন।
ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের তথ্য সংরক্ষণ ও এর বিরুদ্ধে লবিং করে আসা ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের একটি বিভাগে কাজ করতেন আসাফ। বুকে গুলি করে তাকে নাবলুসে হত্যা করা হয় বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ফিলিস্তিন ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের মহাসচিব মুস্তাফা বারঘোতি বলেন, ‘এসব হত্যাকাণ্ড বিপজ্জনক উসকানি। আমার মনে হয়, এ সঙ্ঘাত বড় ধরনের ইন্তিফাদায় রূপ নিতে পারে।’
গত তিন সপ্তাহে ইসরাইলে ৪টি হামলায় ১৪ জন নিহত হন। এসব হামলার পর পশ্চিম তীরে অভিযান জোরদার করে ইসরাইল। সূত্র : আল-জাজিরা।
Leave a Reply