পটুয়াখালী তে ভাষার মাসেও শহীদ মিনার যখন অবহেলিত...
প্রতিনিধিঃ গতো ১১ ফেব্রুয়ারি ইং শনিবার পটুয়াখালীতে ভাষার মাসে শহিদ মিনার বেদিতে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উদযাপন করে সমালোচনার মুখে পড়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বাংলা ভাষার অবস্থান নিয়ে বাঙালির যে ভাষাচেতনার উন্মেষ তারই সূত্র ধরে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ গুলি চালায় এতে রফিক, জব্বার, শফিউর, সালাম, বরকত সহ অনেকেই হতাহত হন। ১৯৫২ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিনটি জাতীয় শহিদ দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে।ভাষার জন্যে তাদের এই আত্মত্যাগ স্মরণীয় করে রাখতে শহীদ মিনার নির্মিত এবং সর্বস্তরের জনগণ এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন।
কিন্তু পটুয়াখালী জেলা শহরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ১০৫তম সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান করতে গিয়ে উৎভট কাণ্ড ঘটায়। বিদ্যালয় মাঠের দক্ষিণ পাশে নির্মিত শহিদ মিনার বেদিতে নাচ-গানের মঞ্চ তৈরি করে যাতে জমকালো আয়োজন হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করা হয় জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলামকে। যদিও তিনি অংশ নেননি কিন্তু বাকি অতিথিরা জুতা পায়ে মঞ্চ মাতিয়েছেন।
সমালোচিত বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ভাষার মাসে জুতা পায়ে শহিদ মিনার বেদিতে উঠার নিয়ম নাই। এ রকম কিছু হয়ে থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার সন্ধ্যায় সরেজমিন দেখা গেছে, বিদ্যালয় মাঠের দক্ষিণ পাশে নির্মিত শহিদ মিনারকে কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা হয়েছে। মিনারের বেদিকে লালগালিচা দিয়ে ঢেকে অতিথিদের বসাতে আসন ও সাজসজ্জা করা হয়েছে। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলামকে প্রধান অতিথি রেখে এডিসি মো. হুমায়ন কবিরকে বিশেষ অতিথি করেছেন।এছাড়াও অতিথির মঞ্চে ছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মজিবুর রহমানসহ অনেকে।অনুষ্ঠান শুরুর দিকে শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ করেন এডিসি মো. হুমায়ূন কবির, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মজিবুর রহমান, সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমীন। এতে সভাপতিত্ব করেন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চলে নাচ-গান। এ ঘটনার একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে- পুরস্কার বিতরণ থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সবাই জুতা পায়ে মঞ্চে উঠেছেন; যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ভাষাসৈনিক প্রয়াত মোহাম্মদ এমদাদ আলী অ্যাডভোকেটের ছেলে এনায়েতুর রহমান বলেন, ভাষার মাসে শহিদ মিনার বেদিতে মঞ্চ করে শহিদ ও ভাষা আন্দোলনের প্রতি অবমাননা করা হয়েছে। তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর বলেন, এ রকম ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই। তদন্ত কমিটি করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করছি।
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শহিদ মিনার বেদি ঢেকে মঞ্চ তৈরি করেছি। তাতে সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে জুতা পায়ে দিয়ে ওঠা ভুল হয়েছে। আগামীতে এ রকম ভুল হবে না।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মজিবুর রহমান বলেন, শহিদ মিনার ঢেকে আয়োজন করা হয়েছে। যে কারণে বিষয়টি মাথায় ছিল না। তবে এটা ভুল হয়েছে।পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া এডিসি মো. হুমায়ূন কবির বলেন, অনুষ্ঠানের মঞ্চ যে শহিদ মিনারের বেদিতে করেছেন সেটা আমি অবগত ছিলাম না। জানা থাকলে এমন হতো না। আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দেখছি।
ভাষার মাসে এমন ঘটনায় আয়োজকদের শাস্তির দাবি করেছেন ভাষাসৈনিকের পরিবার ও একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ।
অপূর্ব সরকার
বিশেষ প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা টিভি, পটুয়াখালী।
০১৭৯০৭৬১০৭৭।