বাউফলে উপজেলা চেয়ারম্যানের উপর হামলা
দুই ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৬ জনের
বিরুদ্ধে মামলা গ্রেফতার ২
মোঃ মহিউদ্দিন সুমন,
পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারের ওপর হামলার ১৪ দিন পর মামলা হয়েছে। রোববার (২ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বগা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. দিদারুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কালাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম ফয়সাল আহম্মেদ মনির হোসেন মোল্লাকে ওই মামলায় ১ নম্বর এবং তার ভাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ও চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক আলকাস মোল্লাকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। মামলায় মোট ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা সবাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আসম ফিরোজের অনুসারী। এ মামলায় মো. জাফর (৩৭) ও শামীম হোসেন (৩২) নামে এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত শামিম নাজিরপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাফর বাউফল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি।
মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয় ১নং আসামী ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ফয়সাল আহম্মেদ মনির মোল্লা ও ২নং আসামী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক সুইজগিয়ার দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানকে জখম করে।
তবে ঘটনার পর উপজেলা চেয়ারম্যানের ওপর হামলার একটি স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ওই ছবিতে ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ফয়সাল আহম্মেদ মনির মোল্লা ও এনামুল হক আলকাচসহ মামলার অনেক আসামীকে দেখা যায়নি। ঘটনার সময় তারা ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২শ মিটার দুরে জনতা ভবনে অবস্থান করছিলেন।
বাউফল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম খলিল বলেন, উপজেলা যুবলীগ সাধারন সম্পাদক এসএম ফয়সাল আহম্মেদ মনির মোল্লা জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান। ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন তার মুক্তির দাবিতে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে হাজার হাজার নারী-পুরুষ। পরে ২০০৩ সালে বিএনপি সরকারের আমলে তিনি প্রথমবার কালাইয়া ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তখন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকা অবস্থায় বিএনপির হেবিওয়েট নেতাকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর একাধারে চারবার তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী উপজেলা যুবলীগের কাউন্সিলে তিনি সভাপতি পদ প্রত্যাশী। ইতিমধ্যে জেলা যুবলীগের দপ্তরে সিভিও জমা দিয়েছেন। জেলা ও তৃণমূলের আলোচনায় সভাপতি পদে শীর্ষে রয়েছে তার নাম। যুবলীগের শীর্ষ পদ পেতে বাঁধা সৃষ্টি ও রাজনৈতিক ভাবে হয়রানি করার জন্যই তাকে ষড়যন্ত্রমুলকভাবে মামলার প্রধান আসামী করা হয়েছে। একই মামলায় তার ছোট আপন ভাই চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকেও ষড়যন্ত্রমুলক আসামী করা হয়। তিনি বলেন, এই মামলায় যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারাও ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। উপজেলা আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপন করতে দলীয় কার্যালয় জনতা ভবনে ব্যাপক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এসব কর্মসূচিতে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে প্রায় ৩০ হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত হন। শান্তিপূর্ণ ভাবেই চলছিল দলীয় কর্মসূচি। শান্তিপূর্ণ ওই কর্মসূচি পÐ করতে পরিকল্পিতভাবে সংঘাতের সৃষ্টি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব হাওলাদার। তার বের করা র্যালী উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা। তারপরেও তিনি প্রশাসনের বাঁধা উপক্ষো করে জনতা ভবনে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় ইচ্ছাকৃতভাবেই তিনি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। এতে তিনি আহত হন। যারা তাকে আহত করেছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত না তাদের ষড়যন্ত্রমুলকভাবে আসামী করা হয়েছে।
উল্লেখ্য গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আসম ফিরোজ এমপি, জেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল ও উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার পৃথক পৃথক র্যালী বের করেন। বিবদমান তিনপক্ষের মধ্যে সংঘাত এড়াতে প্রশাসন তাদেরকে পৃথক স্থান ও সময় বেঁধে দেয়। বেলা ১১টার পরে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার হাইস্কুল মাঠ থেকে তার অনুসারীদের নিয়ে র্যালী বের করে জনতা ভবনের দিকে রওনা হন। জনতা ভবনে আওয়ামীলীগের অপরপক্ষ অবস্থান করছিলেন। দু’পক্ষের মুখোমুখি সংঘাত এড়াতে ইউএনও এবং তৎকালিন ওসি উপজেলা চেয়ারম্যানের র্যালী উপজেলা গেটের সামনে আটকে দেয়। উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীরা প্রশাসনের বাঁধা উপেক্ষা করে জনতা ভবনে যাওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায় পুলিশের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীরা। তারা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। প্রায় আধা ঘন্টা ধরে চলে এ সংঘর্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও লাঠিচার্জ করেন। আহত হয় পুলিশের ওসি ও ৬ পুলিশ সদস্যসহ প্রায় ৩০জন। সংঘাত সংঘর্ষের একপর্যায় উপজেলা চেয়ারম্যান ৫/৬জন অনুসারী নিয়ে পুলিশের চোখ এড়িয়ে জনতা ভবনে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় আসম ফিরোজ এমপির অনুসারীদের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সংঘর্ষে আহত হন উপজেলা চেয়ারম্যানসহ দুই পক্ষের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধিন রয়েছেন। ঘটনার ১৪ দিন পর মামলা দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করে বাউফল থানার নবাগত ওসি এটিএম আরিচুল হক বলেন, অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।