একজন বীরের প্রস্থান!!!
১৯৭১ সালে লন্ডনে পড়া অবস্থায় নিজের পাকিস্তানি পাসপোর্টে আগুন দিয়েছিলেন তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা,ঢাকা মেডিকেল কলেজের জিএস ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং নিজেকে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিণত করেছিলেন।
যুদ্ধের দামামা বেজে উঠায় ঠিক সেই মুহূর্তে মর্যাদাপূর্ণ এফআরসিএস (FRCS) পরীক্ষার ফাইনাল পার্ট এ অংশগ্রহণ না করে দেশে মাতৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য চরম প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যদিয়ে ভারতে আসেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের আগরতলায় স্থাপিত বাংলাদেশ ফিল্ড হসপিটালের প্রতিষ্ঠাতা এই বীরযোদ্ধা। সে সময় তাঁর প্রতিষ্ঠিত ৪৮০ বেডের বাংলাদেশ ফিল্ড হসপিটালটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের আধুনিক ও উন্নত মানের চিকিৎসার শেষ আশ্রয়স্থল।যদিও পরবর্তীতে এটি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়।
জাতীয় স্বাস্থ্য নীতির প্রবক্তা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন মূলত গরিবের ডাক্তার।
স্বাধীনতার পর তার পরামর্শে বঙ্গবন্ধু সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে ওষুধ আমদানি করেছিলেন।
ভাসকুলার সার্জন জাফরুল্লাহ চৌধুরী চট্টগ্রামের রাউজানের সন্তান।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তীর্থভূমি চট্টগ্রাম। আর সেইসময় জাফরুল্লাহ চৌধুরীদের চট্টগ্রামের বাড়িতে বিপ্লবী দর্শনের চর্চা হতো।কারণ তাঁর পিতা ছিলেন ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেনের ছাত্র।
সমাজতান্ত্রিক চেতনার এই মানুষটি কোন সময়ে বাঁকা চোখের বা রক্তচক্ষুর পরোয়া করে নাই । তিনি ছিলেন অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার।আজীবন ভেবেছেন সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের কথা।
কথা বলেছিলেন অধিকারহারা মানুষের পক্ষে।
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণের সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠনেও তার অবদান রয়েছে। সভার প্রথম মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেছিলেন তিনি।
বাকশালের যোগদানের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর মত নেতার আহ্বানকে সবিনয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
নতি স্বীকার করেননি কোন লোভের কাছে, তাইতো জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকারের মন্ত্রিত্বকে উপেক্ষা করেছেন।
ভারতীয় পুলিশ কর্মকর্তা পিতার সন্তান জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিলাসবহুল জীবন ত্যাগ করে বেছে নিয়েছিলেন সাধারণ জীবন।
ব্যক্তিজীবনে সহায় সম্পত্তির প্রতি কোন লোভ ছিলনা তার কখনো। নেই কোন গাড়ি-বাড়ি নিজের নামে।উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পৈতৃক সম্পত্তি দিয়ে দিলেন নিজের বোনকে।
সর্বশেষ নিজের দেহটা পর্যন্ত দিয়ে গেছেন মানবের তরে।
ওপারে ভাল থাকবেন এই মহান কীর্তিমান পুরুষ।
লেখকঃ মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন সাংবাদিক, আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক।
মুক্তিযোদ্ধা টেলিভিশন।
Leave a Reply