ভয় দেখিয়ে কিন্তু বন্ধুত্ব হয়না।
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির বিরোধিতা করে পাকিস্তানের সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল আমেরিকা এবং চীন। সেই দুটি দেশের কাছে এখন বাংলাদেশ একটি মধুর রাষ্ট্র।
দক্ষিণ এশিয়ার এই ছোট্ট দেশটির দিনদিন
ভূ-রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশকে নিয়ে রীতিমতো চলছে দড়ি টানাটানি। বাংলাদেশকে কাজে লাগাতে চাই এই দুটি দেশ । কারণ বাংলাদেশে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি দেশ ।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের দরকষাকষির পরিধি ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হবে। আবার উল্টা বিপদও আছে।
স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরে শত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের আজকের এই অবস্থান।
৪৭ এ ভারত বর্ষ ভাগের পর যে রাষ্ট্রটি বাঙালি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিংসা এবং শোষণের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছিল করেছিল দুঃখের বিষয় তাদের বৈদেশিক রিজার্ভ মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলার পক্ষান্তরে বাংলাদেশের ৩২ মিলিয়ন ডলার।
ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বঙ্গোপসাগরের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশকে কাছে টানার চেষ্টা করছেন এই দুটি দেশ।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ভারসাম্য রক্ষা করে আসছিল। সব রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব সুলভ সম্পর্ক বাংলাদেশের অন্যতম পররাষ্ট্রনীতি নীতি। কিন্তু কোন পরাশক্তির অন্যায় ইচ্ছা বাংলাদেশ পুরন করবেনা।
বাংলাদেশের উপর প্রভাব বিস্তারের দৌড়ে এগিয়ে আছে চীন।
চীন বাংলাদেশের এখন বৃহৎ উন্নয়ন অংশীদার। অর্থনৈতিক কিংবা সামরিক উভয় ক্ষেত্রে ।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখিয়ে কাছে টানার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে চীন আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন ।
চীন সুযোগের সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করছে? বাংলাদেশের মন জয় করার চেষ্টা করছে। এই সেই চীন ২০২১ সালে বাংলাদেশের কোয়াডে যোগদানের ব্যাপারে হুমকি দিয়েছিল।
পাশে থাকার উদ্দেশ্য একটাই বাংলাদেশকে আমেরিকান মুখোমুখি করা, নিজের বড় বড় বিনিয়োগসমুহকে সুরক্ষিত করা, Belt and Road Initiative কে শক্তিশালী করা, এবং ভারতকে বিপাকে ফেলা।
মিয়ানমার প্রশ্নে আমরা দেখেছি আসলে কেউ আমাদের বন্ধু নয়। কে বন্ধু, কে বন্ধু নয় আসলে ইতিহাস তা ভালো বলবে।
সেদিন রাশিয়া এবং চীন এই দুটি দেশ জাতিসংঘে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভোট দিয়ে প্রমাণ করল তারা আসলে কে?
মিয়ানমার হচ্ছে চীনের ঐতিহ্যবাহী বন্ধু রাষ্ট্র।
চীন কি আসলে বিশ্বাসযোগ্য রাষ্ট্র? এই চীন কি বিপ্লবের মহানায়ক মাও সেতুং কিংবা তাত্ত্বিক নেতা চেয়ারম্যান দেং জিয়াং পিং আদর্শ অনুসরণ করে?
এই চীন শি জিংপিংয়ের চীন যে চীন দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক আধিপত্যবাদ কায়েমের পরিকল্পনা নিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অর্থনৈতিক করিডোর ব্যবহারের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে আধিপত্য কায়েম করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে ইতিমধ্যে তাদের প্রভাব বলয় রয়েছে মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান( ইমরান খান সরকার) ।
ভূ-রাজনীতির নতুন মেরুকরণে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা দিনদিন বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে। সেখানকার রাজনীতির নতুন ফ্যাক্টর সৌদি -ইরান বন্ধুত্ব। সেখানে বাড়ছে চীন-রাশিয়া বলয়ের প্রভাব।
তাই আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়াকে নিয়ে নতুন করে ভাবছে। ইতিমধ্যে কবজা করেছে পাকিস্তানকে(শাহবাজ শরীফের সরকার) । ভারত আমেরিকার বন্ধুত্ব সর্বজনবিদিত।
ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে। সং সম্প্রতি ভিসানীতি নিয়ে আমেরিকা বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েনে ভারত-বাংলাদেশের পাশে না থাকলে বাংলাদেশ অচিরেই চীনের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে যেটা হবে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে বড় ভূল। এ অঞ্চলের চীনের একছত্র আধিপত্য ভারতের জন্য শুভ হবেনা।
Leave a Reply