পটুয়াখালীতে পেশাদার ডাকাতচক্রের তিন ডাকাত সদস্য গ্রেফতার; ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ট্রাক ও অস্ত্র উদ্ধার
অপূর্ব সরকার,
বিশেষ প্রতিনিধি ,পটুয়াখালী।
পটুয়াখালী শহরের অদূরে রুপালী ফিলিং স্টেশনের ডাকাতির ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত সক্রিয় তিন ডাকাত এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ট্রাক সহ দেশীয় অস্র উদ্ধার করেছে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ।
বুধবার (জুলাই ২৬) পটুয়াখালী জেলা পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উক্ত তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া ডাকাতরা হচ্ছেন ফরিদপুর জেলার ডঙ্গী বাকীগঞ্জ এলাকার আলেফ সরদারের পুত্র মোঃ শাহিদ সরদার (৪০)।
রাজবাড়ী জেলার পূর্ব উজানচর নতুন ব্রিজ এলাকার দুলাল খাঁ এর ছেলে নুরু খাঁ। রাজবাড়ী জেলার নলিয়াপাড়া এলাকার কাজল প্রমানিকের পুত্র মোঃ সুজাত প্রামানিক।
পটুয়াখালী পুলিশ সুপার মোঃ সাইদুল ইসলাম জানান, গত ৪ জুন পটুয়াখালী সদর থানাধীন টাউন কালিকাপুর এলাকার মোঃ রফিকুল ইসলাম(৪২) পিতা আলী হোসেন, গ্রামঃ নয়াপাড়া, থানা-নারায়নগঞ্জ সদর, জেলা-নারায়নগঞ্জ এর মালিকানাধীন রুপালী ফিলিং স্টেশনে রাত্র অনুমান ০৩.১৮ ঘটিকা হতে রাত্র ০৩.৪৫ ঘটিকার সময় উক্ত ফিলিং স্টেশনের অফিস ভবনের মূল দরজার তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে কক্ষের ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা ম্যানেজার এবং দু”জন মেশিন অপারেটরকে দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র দিয়া আঘাত করে মৃত্যুর ভয় দেখিয়া মুখ, দুই হাত-পা, গামছা, লুঙ্গি, মশারির ছেড়া অংশ দিয়ে বেধে বাথরুমে নিয়ে বাহির থেকে দরজা আটকিয়ে দিয়ে ম্যানেজারের কক্ষের মধ্যে প্রবেশ করে অফিস কক্ষের মধ্যে থাকা স্টিলের আলমারী ভেঙ্গে নগদ ৪,৯২,২৭০/- টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায়।
এই ঘটনায় বাদীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পটুয়াখালী সদর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। উক্ত ঘটনার পর পরই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম এর নেতৃত্বে পটুয়াখালী সদর থানার একটি চৌকস অভিযানিক দল বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতির মূল রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে। ডাকতির সংবাদ প্রাপ্তির সাথে সাথে পটুয়াখালী জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে মাঠে নামে। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দু”টি মোবাইল নাম্বারের সূত্র ধরে ডাকাত চক্রের প্রত্যেক সদস্য ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ট্রাক সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ট্রাক উদ্ধারের জন্য অভিযান টিমের সদস্যগন মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেন কিন্তু অত্যন্ত চতুর এবং কৌশলী ডাকাত চক্রের সদস্যগণ ক্ষনে-ক্ষনে গাড়িসহ তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে। কিন্তু অবশেষে অভিযান টিমের দক্ষতা আর প্রযুক্তির কাছে তারা পরাজিত হয়। অতপর বিভিন্ন তথ্য উপাও বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা তথ্যের ভিওিতে গত ২৮ জুন রাত্র অনুমান ১০.১০ ঘটিকার সময় গাজীপুর জেলার টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকা হতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ড ১৪-৮৮৮৪) এবং ট্রাক হতে মোবাইল, তালা কাটার মেশিনসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেন।
গত ১৯ জুলাই এক নং আসামী শহিদ সরদারকে পটুয়াখালী সদর থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আনা হলে, সে ডাকাতির সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে এবং বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকারোক্তি মূলক জাবানবন্দি প্রদান করে। তার দেয়া তথ্যর ভিওিতে অভিযান টিমের সদসগন গত ২৪ জুলাই ডাকাত দলের অপর দুই সদস্য সুজাত প্রামানিক ও নুরু খাঁ ওরফে নুর হোসেনকে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। প্রথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সুজাত ও নুরু ডাকাতির কথা স্বীকার করে এবং বিজ্ঞ আদালতে গত ২৫ জুলাই দোষ স্বীকারোক্তি মূলক জবানবিন্দ প্রদান করে। এই ডাকাত দল অত্যন্ত দূর্ধর্ষ প্রকৃতির। জিজ্ঞাসাবাদে জানায় তারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে বরিশাল বিভাগের ০৬টি জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা হতে তথ্য সংগ্রহ করে ডাকাতির প্রস্তুতি নিয়ে সুযোগ বুঝে ক্ষিপ্র গতিতে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, দোকান-মার্কেট, ফিলিং স্টেশন, গাড়ি ডাকাতি করে তারা দ্রুত কেটে পরে গাঁ ডাকা দেয়। এই দলের প্রত্যেকটি সদস্য অত্যন্ত চতুর প্রকৃতির, ডাকাতি করাই তাদের মূল পেশা। গ্রেফতারকৃত প্রত্যেক ডাকাতের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতিসহ অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
এই ডাকাতির ঘটনায় জড়িত অন্যান্য সকল আসামীকে গ্রেফতারে জোর প্রচেষ্টা অব্যহত আছে বলেও জানান এসপি।