পাবনায় সংখ্যালঘু পরিবারের ও পাউবো'র জায়গা
দখল করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ
পাবনা প্রতিনিধিঃ
পাবনা ফরিদপুরে ক্ষিতিশ চন্দ্র শীল নামে এক সংখ্যালঘু পরিবারের ২৫ শতক জমি জাল রেজিস্টিারি দলিল মূলে জায়গা জবর দখল করে পাকা ভবন নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ডেমড়া বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে ওই জমির সাথে পানিউন্নয়ন বোর্ডের যে জায়গা রয়েছে সেটুকুও জোর করে দখল করে তিনি পাকা ভবন নির্মাণ করছেন। এ বিষয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ দেয়ার পরও পাউবো'র প্রশাসন নিরব ভূমিকায় রয়েছেন। বাজেট পেলে শিঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার আশ্বাস পাউবো কর্তৃপক্ষের। অপরদিকে সম্পত্তি ফেরত পেতে আদালতের দারস্থ হয়েছেন ওই সম্পত্তির এসএ , সিএস রেকর্ডের মালিক ক্ষিতিশ চন্দ্র শীলের ওয়ারিশগণ।
জানাগেছে, পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন ডেমড়া মৌজায় জমিদার বিশ্বনাথ রায়ের বাড়ির বিশ্বস্ত কাজের লোক ছিলেন ক্ষিতিশ চন্দ্রশীল। ক্ষিতিশের বসতবাড়ী না থাকায় ও অতি বিশ্বস্ত হওয়ায় এক সময় বিশ্বনাথ রায় ও তারা নাথ রায় নিজ নামীয় অংশ সিএস খতিয়ানের ৬৭৭ দাগের অংশ মোতাবেক সিএস দাগ ৬৩১ দাগে ২৫ শতক ভূমি দান করেন। ক্ষিতিশ চন্দ্র শীল দানসুত্রে প্রাপ্ত হইয়া তা দখলে নিয়ে দেখাশুনা করা অবস্থায় এসএ জরিপ শুরু হলে সিএস ৬৭৭ খতিয়ানের সিএস ৬৩১ দাগে ২৫ শতক জমি শ্রী ক্ষিতিশ চন্দ্র শীলের নামে এসএ জরিপে এসে ১০৪৬ দাগে সাবেক ৬৩১ নং দাগের ২৫ শতক জমি রেকর্ড প্রাপ্ত হন। এরই মধ্যে ক্ষিতিশ চন্দ্র শীলের ছেলেরা বসবাসের সুবিধার্থে বেড়া বনগ্রামে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। কিছুদিন পর ক্ষিতিশ চন্দ্রশীল মারা গেলে ওই জায়গা পতিত পড়ে থাকে। খাজনা খারিজবীহিন দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় বর্তমানে ওই সম্পত্তি আরএস রেকর্ডে এসে সরকারী ১ নং খাস খতিয়ানভূক্ত হয়।
যা বর্তমানে ক্ষিতিশ চন্দ্রশীলের ওয়ারিশগণ আদালতে রেকর্ড সংশোধনী নালিশী মামলা দায়ের করেছেন। এতে বিবাদী করা হয়েছে পাবনা জেলা প্রশাসক, এডিসি জেনারেল, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তাকে। এ দিকে ক্ষিতিশ চন্দ্রশীলের পুত্র শান্তশীল অভিযোগ করে বলেন, আমরা লোক মূখে খবর পাই ওই ২৫ শতক সম্পত্তি এলাকার প্রভাবশালী হাজি বেলায়েত জাল কাগজপত্র তৈরি করে বিক্রি কবলা রেজিস্টারি দলিল করে সেখানে পাকা ভবন নির্মাণ করছে। বাধা দিতে গেলে আমাদের বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখায়। পরে জমি ফেরত পেতে ও পাকা ভবন নির্মাণ বন্ধ করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।
ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ শিরিন সুলতানা জানান, ক্ষিতিশ চন্দ্র শীলের কাগজপত্র দেখে আমি তাদেরকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় পাকা ভবন নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, পাউবো কর্তৃপক্ষ চাইলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
অভিযোগ রয়েছে ওই জমির জাল কাগজ পত্র মূলে খাজনা দিতে গেলে নায়েব ওই সম্পত্তির খাজনা না নিয়ে ফরিদপুর উপজেলা সহকারী কমশিনার (ভূমি) অফিস থেকে অনুমোদন নিয়ে আসতে বলেন। শান্ত শীল বলেন, প্রভাবশালী বেলায়েত হোসেন তার জায়গার সাথেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ১০ শতকের জায়গা দখলে নিয়ে সেখানেও পাকা ভবন নির্মাণ করছেন। এ বিষয়ে পাবনা পাউবো'র নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয়রা।
জোর করে জমি দখলের ব্যাপারে বেলায়েত হোসেনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন আমি আমার জমিতে পাকা ভবন তৈরি করছি। কারো জায়গা আমি দখল করছি না। আমার ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে আমি ভবন তৈরি করছি। পাউবো'র জায়গা দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লীজ নিয়েছি।
এ ব্যাপারে পাউবো'র নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি বরাদ্দ পেলে অতিদ্রুত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবো।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরের একটি সুত্র জানায়, বেলায়েত হোসেনকে বার বার নোটিশ দিলেও তিনি কোন কিছু পরোয়া না করেই দ্রুতগতিতে পাকা ভবন নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছেন। এর আগে গত বছর ওইখানে উচ্ছেদ অভিযানের জন্য ভেকুসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে দোকান পাট উচ্ছেদ করতে গেলে কোন সচিবের নির্দেশে সে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করা হয়। শেষে উচ্ছেদ না করেই তিন দিন বসিয়ে রেখে ভেকুসহ উচ্ছেদের সরঞ্জামসহ লোকবলের টাকা দিতে হয়েছে সরকারী কোষাগার থেকে।