রাজশাহীতে তাহের হত্যার দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর
মোঃ শামসুজ্জোহা শামীম
বিশেষ প্রতিনিধি, রাজশাহী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে একসঙ্গে একই মঞ্চে দুই আসামিকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয়।
এ দুই আসামি হলেন- ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম। গত ১৭ বছর ধরে এ দুই আসামি এই কারাগারেই বন্দী ছিলেন। এদের মধ্যে ড. মহিউদ্দিন ছিলেন ড. তাহেরের সহকর্মী। কাগজপত্রে ঝামেলা থাকায় এই সহযোগী অধ্যাপকের পদোন্নতিতে আপত্তি জানিয়েছিলেন অধ্যাপক এস তাহের। এ কারণে ড. মহিউদ্দিন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে।
দুই আসামির রায় কার্যকর নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর টহল বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে ভিড় করেন গণমাধ্যমকর্মী এবং উৎসুক সাধারণ মানুষও। এ অবস্থায় রাত ৯টা ১৪ মিনিটে কারাগারের পেছনে দক্ষিণ দিকের ফটক দিয়ে কর্মকর্তাদের গাড়ি বহর ভেতরে ঢোকে।
গত মঙ্গলবার জাহাঙ্গীর ও মহিউদ্দিনের স্বজনদের শেষবারের মতো সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। তখন কারা কর্তৃপক্ষ তাদের একটি চিঠি দেয়। এই চিঠি বাড়ি নিয়ে গিয়ে খুলতে বলা হয়। চিঠিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তারিখ ও সময় লেখা ছিল। সে অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে রায় কার্যকর করা হয়।
মৃত্যুদণ্ড ও কার্যকর করতে আগেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয় আটজন জল্লাদকে। কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গণপূর্ত অধিদপ্তর ১৫ দিন আগে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুতির কাজ শুরু করে। মৃত্যুকূপটি দীর্ঘদিনের পুরেনো বলে কারাগারের দক্ষিণ দিকের দেওয়ালের পাশে উন্মুক্ত ফাঁসির মঞ্চটি সংস্কার করা হয়। এছাড়াও যে দঁড়িতে ঝুলানো হয়, তাতে আসামিদের তিনগুন ওজনের বস্তু বেঁধে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ফাঁসির দঁড়িটিও চূড়ান্ত করা হয়।
প্রথমে ১৭ জন কয়েদিকে জল্লাদের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তবে কারা কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় আটজনকে চূড়ান্ত করে। এরা হলেন- আলমগীর, নাজমুল, সুমন, উজ্জ্বল, নাসির, মজনু, আশরাফুল ও রিয়াজুল। এদের মধ্যে প্রধান জল্লাদ আলমগীর। তিনি একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। আলমগীর এর আগেও জল্লাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। জল্লাদ দলের দুইজন নতুন সদস্য ছিলেন। এরা হলেন- রিয়াজুল ও উজ্জ্বল। উজ্জ্বল পুঠিয়ার আলোচিত মহিমা ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাদের প্রশিক্ষণ ও ফাঁসি কার্যকরের একাধিক মহড়া দেওয়ানো হয়।
রাত ৯টায় দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি জানানো হয়। এরপর তাদের গোসল করিয়ে নামাজ পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়। পরে কারা মসজিদের ইমাম মাওলানা মোজাহিদুল ইসলাম তাদের তওবা পড়ান। এরপর ১০টার আগেই তাদের ফাঁসির মঞ্চের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। চারজন জল্লাদ দুই আসামিকে ধরে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যান। দুজনকে একই মঞ্চে তোলার পর দুইজন জল্লাদ তাদের কালো কাপড়ের জমটুপি ও গলায় দঁড়ি পরিয়ে দেন। রাত ১০টা ১ মিনিটেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আট জল্লাদের মধ্যে টিম প্রধান হাতল টেনে ফাঁসি কার্যকর করেন।
জানা গেছে, ফাঁসি কার্যকরের সময় কারাগারের ডিআইজি প্রিজন, সিনিয়র জেল সুপার ও জেলার ছাড়াও জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন, মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। রাতেই জাহাঙ্গীরের লাশ পাঠানো হবে রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানার খোঁজাপুরে। আর মহিউদ্দিনের লাশ পাঠানো হবে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গায় উপজেলায়।