পটুয়াখালীতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণে বাধা দেয়ায় ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি
অপূর্ব সরকার,
বিশেষ প্রতিনিধি,পটুয়াখালী।
পটুয়াখালীতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভবন নির্মানের প্রতিবাদ করাতে এক ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিবারকে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দিয়েছে পটুয়াখালী জজ কোর্টের এ্যাডভোকেট মোঃ আবুল কালাম আজাদ। এমনই অভিযোগ করেছেন পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কলেজ রোড বিএডিসি সংলগ্নের বাসিন্দা ও গলাচিপা পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মীনা রানী নাগ। এ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দিলেও নেয়া হয়নি কোন ব্যাবস্থা। কারো তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভবন নির্মানের কাজ।
ভুক্তভোগী মীনা রানী বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বিল্ডিং করতে হলে পাশে ৩ ফিট জায়গা রাখতে হয়। কিন্তু আমার ঘরের পাশে এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ তিন ফিট তো দুরের কথা এক ইঞ্চি জায়গা পর্যন্ত রাখে নাই। আমার সীমানা দেয়ালের উপর তার বিল্ডিংয়ের দেয়াল উঠাইয়া তার উপরে ছাদ দিয়ে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমার টিনের ঘরের চাল ভেঙ্গে চুরে একাকার হয়ে গেছে। তার কনস্ট্রাকশনের সব মালামাল আমার জায়গার ভিতরে রেখে দিয়েছে। এমনকি তার দেয়াল প্লাস্টারের কাজে ব্যাবহৃত বাঁশ গুলো আমার এরিয়ার ভিতরে রাখা। সে তার লেবারদের বলেছে কেউ বাঁধা দিতে আসলে তারে ধরে মারবি। তার লেবাররা আমাকে এসে জিজ্ঞেস করে যে আমি জায়গা বিক্রি করবো কি-না। তাদের চিন্তা আমাকে এখান থেকে উচ্ছেদ করা। তিনি ২০১৮ সালে জায়গা কেনার পর থেকেই আমাদের উপর টর্চার শুরু করেছে। সে তার একটা নেইম প্লেট আমাদের জয়গার ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছে। আর আমরা যখন তার কাছে সেটা জিজ্ঞেস করতে যাই। তখন সে বলে আমার নেইম প্লেটে হাত দিলে হাত কাইটা ফালামু। তোরা নোমো হয়ে তোদের এত সাহস আসে কোথা থেকে। আমি পৌরসভায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমাদের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, মহিলা কাউন্সিলর সবাইকে জানিয়েছি। মেয়ের সাহেব লোক পাঠিয়েছিলেন তারা এসে দেখে গেছে। কাউন্সিলরের কাছে বলার পরে সে বলছে আমি আরিফকে বলে দিছি। এই আরিফ হচ্ছে আবুল কালাম আজাদের ভাই। সে না-কি সাংবাদিক। আবার তার বিল্ডিংয়ের সামনে একটা সরকারী বিদ্যুৎ লাইনের পোস্ট আছে সেটাকে আমাদের সরিয়ে ফেলতে বলে। আর আমাদের চালের টিন তাদের দেয়ালে লাগতেছে সেই টিন জদি আমরা না সরাই তাহলে তারা আমাদের টিন ভেঙ্গে ফেলবে। আর লেবারদের তো সে নিজে বারবার বলে কেউ বাধা দিলেই তারে মাইররা ফালাবি। এখন এই সমস্যার কোন সমাধান হবে কিনা আমি জানি না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পটুয়াখালী পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের বিএডিসি সংলগ্ন একটি বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। তার পাশেই একটি রয়েছে তার দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি হিন্দু পরিবারের টিনের ঘর। ঘরটিতে একেবারে কোল ঘেষে রয়েছে নির্মাণাধীন ভবনটি। নিয়ম অনুসারে যে কোন ভবন নির্মানের জন্য তার পাশে তিন ফুট জায়গা রেখে নির্মানের কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না সেই নিয়ম। এমনকি বহুতল ভবন নির্মানের সময় আশেপাশের বাসা বাড়ির ও রাস্তা ঘাটে মানুষের নিরাপত্তার জন্য যে ব্যাবস্থা গ্রহন করা উচিৎ, সেখানে নেই তেমন ধরনের কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা। এমনকি পাশের টিনের ঘরটিতে চালের অনেকাংশ ইট পাথরের আঘাতে দুমরে মুচড়ে গেছে। ঘরটির পিছনের জায়গায় রাখা দেয়াল প্লাস্টারের কাজে ব্যাবহৃত বাস সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। দেখে মনে হয় এ যেনো জোর যার মুল্লুক তার। এরকম অনিয়ম সবার চোখের সামনে চললেও তা সবাই দেখেও না দেখার ভান করে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত এ্যাডভোকেট মোঃ আবুল কালাম আজাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পৌরসভার টাউন প্লানার ফারজানার নির্দেশনা নিয়ে ভবন নির্মাণ করেছি। আর ভবন নির্মাণ করতে অন্তত ছয় মাস সময় লেগেছে এতদিনে কিছু বললো না এখন কাজ শেষ এখন এসে এরকম অভিযোগ করার মানে বুঝিনা। তাছাড়া ওই মহিলা একটু রাগী মানুষ তাই এরকম করেছে। আমি তিন ফুট জায়গা রেখেই ভবন নির্মাণ করেছি । এখানে সংখ্যা লঘু বলতে কিছু না। প্রতিবেশী কখনও সংখ্যা লঘু হয় না। তাছাড়া পৌরসভায় কোন অভিযোগ হয়েছে কি-না আমি জানি না। আর আমার বিল্ডিংয়ের কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছে এমন কিছু আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে জানতে পটুয়াখালী পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে পৌরসভার পিএ টু মেয়র মুক্তি নন্দী বলেন, আমাকে মেয়র সাহেব ঘটনা স্থল পরিদর্শন করতে বলেছেন। আমি পরিদর্শন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
প্যানেল মেয়র ও ২নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর এস এম ফারুক বলেন, তার অবজেকশন থাকলে একটা স্থাপনা নির্মাণের শুরুতেই দেয়া উচিৎ ছিল। শুরুতে দিলে আমরা থামিয়ে দিতাম। আর আমাদের পদক্ষেপ বলতে সে জদি মেয়র সাহেবের কাছে দাবি জানাবে। তাহলে তদন্ত করে দেখে জদি কোন উল্টা পাল্টা হয়ে থাকে তাহলে সেই অনুযায়ী যা হওয়ার তাই হবে। পৌরসভায় মীনা রানি আগেই অভিযোগ দিয়েছে কোন ব্যাবস্থা নেয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে এস এম ফারুক বলেন, পটুয়াখালীতে একটা বিল্ডিং বিধি মোতাবেক নাই।
পৌরসভার এক প্রবিন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)ব্যক্তি বলেন সব কাজ এখন মানুষ দেখানো পৌরসভার কোন দায় দায়িত্ববোধ বলতে কিছু নেই।