জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মিলে-মিশে এক হয়ে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া এটাই আমাদের মুল প্রত্যাশা
জাহিদ হোসেন স্টাফ রিপোর্টার মুক্তিযোদ্ধা টিভি।
আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বলে নিজেকে অনেক গর্বিত বলে মনে করি। কারণ আমার বাবা ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে চাঁদপুর সদর পুরান বাজার অঞ্চলে বাবার সহপাঠীদের সঙ্গে যুদ্ধ অংশগ্রহণ করিয়াছেন। আমার বাবা আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু বাবার যুদ্ধের ইতিহাস লিখে গেছেন পশ্চিম জাফরাবাদের মানুষের অন্তরের মাঝে। আমাদের গ্রামের মানুষেরা আমাকে রাস্তাঘাটে চলার পথে দেখতে পেলে বলে তুমি কি কালু খার ছেলে। আমি তাদের কথার সাড়া দিয়ে বলি যে আমি তারই ছোট ছেলে। আমাদের গ্রামের লোকজন আরো বলে তোমার বাবা অনেক আত্মীয়-স্বজনকে পাকিস্তানের হাত থেকে এমন কি এই গ্রামের কিছু পাকিস্তানি দালালদের কাছ থেকে রক্ষা করেছেন। তোমার বাবার মত সৎ নিষ্ঠাবান প্রকৃত সাহসী ভাল মানুষ
আজও কোথায়ও দেখতে পাইনি। তোমার বাবা একজন প্রকৃত অর্থে ভালো মানুষ ছিলেন এ গ্রামে। আমরা দোয়া করি আল্লাহ যেন তোমার বাবাকে জান্নাতবাসী করেন। আমি বাবার এই ভালোবাসার কথাগুলো মানুষের কাছে শুনিলে আনন্দে কারণে আমার দু চোখে অশ্রু ঝরে পড়ে। আর যদি আমার বাবা বেঁচে থাকতেন তাহলে আমাদের দু’ভাই-বোনের কষ্ট পেতে হতো না এবং সরকারি একটা চাকরির জন্য আত্মীয়-স্বজনদের এবং দালালদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হতো না। আজ অবহেলায় পরে থেকে অসহায় ভাবে বেকার সমস্যায় ভুগতে হতো না। সকল নেতা-নেত্রীর কাছে চোখের মনি থাকতাম বাবা বেঁচে থাকিলে একটা সুন্দর সরকারি চাকরি খুঁজে পেতাম। বাবা নেই আমাদের মূল্য নেই, আর যদি আমার বাবা বেঁচে থাকতেন তাহলে ২৬ শে মার্চে যে ঘটনা ঘটেছিল আমার মা আমার সাথে তা কখনো সেই মুক্তিযোদ্ধার সাহস হতো না। আমি আমার বাবাকে ধারণ করে সকল মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান ও ভালবাসার চোখে দেখি। কারণ আমার বাবা নেই কি হয়েছে তারাই তো আমার বাবার সমতুল্য সঙ্গী, এমন কি এদের দেখে আমার বাবাকে আমার বুকের মাঝে সব সময় চিন্তা চেতনায় মুগ্ধ থাকি। আমার বাবার সহপাঠী মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা ভালবাসলে কি হবে তারা তো এই অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে ভালো চোখে দেখেনা। আমাদের যখন ২৬শে মার্চ চাঁদপুর স্টেডিয়ামে ডাকা হয় তখন আমার মাকে নিয়ে চলে যাই। চাঁদপুর স্টেডিয়াম মাঠে প্রবেশ করার ফলে দেখি আমাদের পরিচিত কোন মুক্তিযোদ্ধারা আছে কিনা। আমার পরিচিত কাউকে চোখে পড়িলো না। তারপর নজর করি কোন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধার আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই অনুসারে চেয়ারে বসি মাকে নিয়ে। বসতে না বসতে লুৎফর রহমান নিজে দুজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন তোমরা এখান থেকে উঠে অন্য সিটে বসো এটা মুক্তিযোদ্ধাদের বসার স্থান। আমি সেই মুক্তিযোদ্ধাকে বলি চাচা আমরা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। পাশে বসে একজন মুক্তিযোদ্ধা দাড়িওয়ালা উনি বলে মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় পত্র আছে। আমি মুক্তিযোদ্ধারকে বলি এখানে পরিচয় ছাড়া কোন মুক্তিযোদ্ধার আসা হয় না। সেই মুক্তিযোদ্ধা তার নাতনিকে নিয়ে বসে। অন্য মুক্তিযোদ্ধা কে ডেকে ডেকে এনে পাশে বসার জন্য আমাদের উঠার অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু আমি অন্য মুক্তিযোদ্ধর উদ্যোগে বলি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে উঠিয়ে অন্য মুক্তিযোদ্ধাকে বসার জন্য ব্যাকুল হয়ে গেছেন এটা মানে কি। তখন আমি শক্ত থাকার কারণে তারা আর পারে না জোর করতে। এটা কেমন রাষ্ট্র এটা কেমন দেশ। যে দেশে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের প্রতি আস্থা নেই। এক মুক্তিযোদ্ধা আরেক মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে দেখতে পারেনা। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সম্মান রক্ষা করার জন্য এবং দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিয়াছেন। এর মানে কি হিংসা বিচ্ছেদ করা। দেশকে অপমান করা। এদেশের মুক্তিযোদ্ধা নেই এটা বলে ভুল হবে কারণ এ দেশ নিজে নিজে স্বাধীন হয়নি নয় মাসে স্বাধীন হয়ে গেছে রক্ত সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যদি হয়ে থাকেন এমন করবেন না আপনারা যদি সত্যিকারে দেশের স্বার্থে যুদ্ধ করিয়া থাকেন। আপনাদের দ্বারাই আমার মা অনেক কষ্ট পেয়েছে ২০১৬ সালের ২৬শে মার্চে সেই তারিখটি এখন আমি ভুলিনি আমার জীবনের স্মরণীয় থাকবে সেই দিনটি কথা। আমার মাকে ও আমাকে আপন ভেবে কথা বলিলেন না, অপমান করলেন ৩০ লক্ষ জীবন দেওয়া বাঙালিকে। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করি। এই সংগঠন তৈরি করার আগে আমাদের ভিতরে মনুষত্ব ভালবাসা সৃষ্টি করতে হবে তারপর হবে সংগঠন। মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে দেখতে পারেনা। এক মুক্তিযোদ্ধা সন্তান আরেক মুক্তিযোদ্ধা সন্তানকে অবহেলা করে। একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের উপকারে আসে না।এটা কেমন স্বাধীনতার দেশ কেমন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান আমরা। আমাদের ভিতরে যৌথ প্রচেষ্টা থাকতে হবে যাতে করে রাজাকার জামাত-শিবিরা আমাদের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর আক্রমণ করতে না পারে এ সুযোগটা আমরা দিতে পারবো না দিব না। ইনশাল্লাহ জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
Leave a Reply