চুয়াডাঙ্গা জীবননগরে মা ক্লিনিকের ভেতরে সেবিকা কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা।। হত্যাকান্ডের আড়াই ঘন্টার মাথায় ঘাতক স্বামী কবির গ্রেফতার: হত্যার কাজে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার|| বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান
চুয়াডাঙ্গা পতিনিধিঃ
বায়েজিদ জোয়ার্দার
চুয়াডাঙ্গা জীবননগর থানাধীন জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর অদূরে অবস্থিত মা নার্সিং হোম এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারের রিসিভশনে গত ২৭.শে জানুয়ারি ২০২৪ ইং রাত অনুমান ৮:৪০ ঘটিকায় ভিকটিম মোছাঃ হাফিজা খাতুন (৩৮), পিতা-মোঃ সমসের আলী, সাং-সন্তোষপুর, থানা-জীবননগর, জেলা-চুয়াডাঙ্গাকে ক্লিনিকের লোকজন ও পথচারী গলাকাটা রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ সংক্রান্তে ভিকটিমের পিতা মোঃ সমসের হোসেন বাদী হয়ে জীবননগর থানার মামলা নং-১৫ তারিখ-২৮.শে জানুয়ারি ২০২৪ ইং ধারা-৩০২ পেনাল কোড রুজু করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান,পিপিএম-সেবা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। পুলিশ সুপার নির্দেশনা মোতাবেক মোঃ নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, পিপিএম-সেবা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্), চুয়াডাঙ্গা এবং জাকিয়া সুলতানা, সহকারী পুলিশ সুপার(দামুড়হুদা সার্কেল), চুয়াডাঙ্গার নেতৃত্বে জীবননগর থানা ও সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল, চুয়াডাঙ্গা টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতঃ ঘাতককে গ্রেফতারের লক্ষে অভিযান পরিচালনা করে। ক্লিনিকে কর্তব্যরত অন্যান্য সদস্যদের প্রদত্ব তথ্য বিশ্লেষণ করে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগীতায় অভিযানিক টিম
গত ২৭.শে জানুয়ারি ২০২৪ ইং রাত অনুমান ১১:১০ ঘটিকায় ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতিকালে জীবননগর বাসস্ট্যান্ড এলাকা হতে ঘাতক(ভিকটিমের স্বামী) মোঃ কবির হোসেন(৩৮), পিতা-মোঃ জেকের আলী, সাং-বালিহুদা, থানা-জীবননগর, জেলা-চুয়াডাঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামী কবির হোসেনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম মোছাঃ হাফিজা খাতুন (৩৮), পিতা-মোঃ সমসের আলী, সাং-সন্তোষপুর, থানা-জীবননগর, জেলা-চুয়াডাঙ্গা এর আনুমানিক ২৫ বছর পূর্বে জনৈক মোঃ শহিদুল এর সাথে বিবাহ হয়। তাদের সাংসারিক জীবনে দুটি সন্তান রয়েছে। একটি মেয়ে বয়স অনুমান ২৩ বছর এবং একটি ছেলে বয়স অনুমান ১৫ বছর। সাংসারিক জীবনে ভিকটিমের ১ম স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় আনুমানিক ১২-১৩ বছর পূর্বে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ভিকটিম দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ মা নার্সিং হোম এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারে নার্স হিসাবে কাজ করত এবং ২য় তলায় অপারেশন থিয়েটার এর পাশের রুমে থাকত। ভিকটিম নার্সিং হোম এ চাকরী করাকালে নার্সিং হোম এ টাইলস মিস্ত্রী হিসাবে কাজ করার সময় আসামী মোঃ কবির হোসেনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং আসামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ভিকটিম হাসপাতাল পাড়াস্থ মা নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই থাকত,আসামী মাঝে মাঝে সেখানে আসা যাওয়া করত এবং সাংসারিক খরচ দিত। কিছুদিন যাবৎ কবির হোসেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভিকটিম হাফিজা খাতুনকে সন্দেহ করত এবং মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হতো। গত ২৭শে জানুয়ারি ২০২৪ ইং তারিখ সকাল অনুমান ১১:০০ ঘটিকার সময় আসামী ভিকটিমের কর্মস্থলে আসে তখন সাংসারিক বিষয় নিয়ে তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি সহ তুমুল ঝগড়া হয়। একই তারিখ রাত অনুমান ৮:৪০ ঘটিকার সময় আসামী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমের রুমে প্রবেশ করে।ভিকটিমকে বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় আসামী তার গলার বাম পাশে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে গলা কাটা রক্তাক্ত জখম করে। ভিকটিম ঠেকাতে গেলে তার বাম হাতের কব্জির উপরে কাটা রক্তাক্ত জখম করে আসামী পালিয়ে যায়। এ সময় ভিকটিম নিজেকে বাঁচানোর জন্য ২য় তলা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় নিচ তলার গেট পর্যন্ত চলে এসে সেখানে পড়ে যায়। তখন আশপাশের লোকজন সহ মা নার্সিং হোম এ কর্মরত আয়া বিউটি খাতুন সহ আরো অনেকে ছুটে এসে ভিকটিমকে চিকিৎসার জন্য উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যায়। জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করে।
*উদ্ধারকৃত আলামত*
১। হত্যার কাজে ব্যবহৃত রক্তমাখা ধারালো ছুরি।
২। হত্যার সময় আসামীর পরিহিত রক্তমাখা জামা, প্যান্ট।