ট্রান্স জেন্ডার : বিপর্যয়ের পদধ্বনি
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
বায়েজিদ জোয়ার্দার
[অত্যন্ত সহজ করে পাঠকের বোঝার জন্য বলছি— ট্রান্স জেন্ডার মানে হলো– কোনো একজন পুরুষ থেকে নারী হয়ে ওঠা। কিংবা কোনো পুরুষ নিজেকে অপারেশনের মাধ্যমে নারী হিসেবে দাবি করা। কোনো নারী নিজেকে পুরুষ মনে করা; দাবি করা। সামাজিক ভাবে নারী বা পুরুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার দাবি করা।]
আমাদের ইসলাম ধর্ম মতে, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। নারী ও পুরুষ হিসাবে এই মানবজাতির সৃষ্টি। যাদের মাধ্যমেই মানব বংশ বিস্তার লাভ করে পৃথিবীতে। এমনকি বিয়ের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন যাপন করেন– এমন পরিবার থেকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, উন্নত আদর্শ নাগরিক গঠনের কথাও বলছেন গবেষকগণ। সুন্দর ও আদর্শ দাম্পত্য জীবন যাপনে নারী পুরুষের বৈবাহিক পদ্ধতি জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত নিয়ম। এটি মানব সভ্যতা ও ইতিহাসের চিরাচরিত একটি প্রথাও। এর বাইরে ট্রান্স জেন্ডার রূপে রূপান্তরিত মানুষ। একজন বিকারগস্ত রুচির মানুষ। যার নারী বা পুরুষ হিসেবে কোনো ভ্যালু নেই। এমনকি এরা অপূর্ণ নারী এবং অপূর্ণ পুরুষ বা বিকলাঙ্গ নপুংসক রূপেই বাকি জীবন পার করবেন। এতে কোনো দ্বিমত নেই কারও।
আমাদের ব্যক্তি পরিবার ও সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয়কে উস্কে দেওয়া।
সামাজিক স্থিথিশীলতা নষ্ট করা। মানব বংশ বিস্তারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা। প্রাকৃতিক রীতি বহিভূর্ত একটি ভিন্ন সংস্কৃতি হলো— এ ট্রান্স জেন্ডার। এটি হচ্ছে এমন একটি বিপর্যয় যে— নিজের লিঙ্গ পরিচয়কে অস্বীকার করা। কিংবা নিজেকে নারী না পুরুষ এই পরিচয়ে স্বস্তিবোধের অভাব বোধ করা। নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। আত্মবিশ্বাসের অভাব বোধ করা।
আর এ কথা বললে, খুব বেশি হবে না যে, বর্তমানে এ আগ্রাসন ও বিপর্যয়ের প্রধান টার্গেট হচ্ছে— উঠতি তরুণ যুব প্রজন্ম। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ যুব শিক্ষার্থীরা। যাদেরকে বিভিন্নভাবে রূপান্তিত হবার বা এটাকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসাবে দেখানোর প্রয়াস চালানো হচ্ছে।
ইতোমধ্যে ঢাবি, রাবি ও নর্থ সাউথে এর ভয়াবহ বিস্তারের সংবাদ আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। এ বিতর্কিত বিবর্তন-পদ্ধতির পক্ষে জনবলও তৈরি করা হচ্ছে। তবে সে দিন খুব বেশি দূরে নয়! যে দিন এ আগ্রাসন আমাদের স্কুল কলেজ ও মাদরাসাগুলোতেও ঢুকে যাবে। ঘরে ঘরে ঢুকে পড়বে এ ভয়াবহ আগ্রাসন। গ্রাস করবে আমাদের কোমলতি শিশুদেরকেও। একদিকে অবাধ অপসংস্কৃতির বিস্তার অপরদিকে মিডিয়ার লাগামহীন নগ্ন ভূমিকা এ কাজটাকে সহজ করে তুলছে। মনে রাখতে মানব সভ্যতা ধ্বংস ও মানব বংশ বিস্তার রোধ এবং বিকৃত আচরণের জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার পক্ষে এটি একটি কৌশলী শক্তি।
আমাদেরকে একটি দল হয়ত কখনও মানবতার নামে। নয়ত অধিকার প্রতিষ্ঠার নাম দিয়ে। কিংবা মানবাধিকার বাস্তবায়নের কৌশলে আমাদেরই তরুণ প্রজন্মের পেছনে কাজ করছে। যুব-তরুণদেরকে ব্রেইন ওয়াশ বা প্রোপাগাণ্ডার মাধ্যমে এই ভয়াবহ মানসিক বিকারগস্ত রুচি বোধকে পুশ করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এমনকি আজ এরা সফলও বলা যায়। যা বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে এখন। অনেকের আচার আচরণেও বিরূপ প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। সহজ কথায়, এরা এখন মানসিক বিকারগস্ত। নিজেদের ওপর আস্থা বিশ্বাস নেই যে– সে কী নারী? না একজন পুরুষ?!
এরা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও নেমেছে। সংসদে সংরক্ষিত কোটাও নাকি দাবি করছেন এরা। যা সূক্ষ্ণভাবে সমাজে নারী ও পুরুষের সমতার প্রতি পরোক্ষ একটি ঈঙ্গিতও বহন করে। যা কখনো বিজ্ঞান সম্মতও নয়। এমনকি এটা প্রকৃতি বিরুদ্ধও বটে।
একজন নারী পুরুষে রূপান্তরিত হওয়া। কিংবা পুরুষ নিজেকে নারী হিসেবে দাবি করা– এ নিছক হীনমন্যতা ও রুচির দুর্ভিক্ষ বলা যায়। কারণ পুরুষের গুরুত্ব সর্বযুগেই স্বীকৃত। তখন একজন পুরুষ কীভাবে নিজেকে নারী দাবি করে?
হ্যাঁ, আমরা কখনো নারী বিদ্বেষীও নই। বরং রূপান্তরিত প্রতারক শ্রেণির নারীর বিরুদ্ধে আমাদের বক্তব্য।
আশ্চর্যের বিষয় হলো— অতীতে গোটা বিশ্বে নারীকে পণ্য করে রাখা হয়েছিল। দাসীর মতো আচরণ করা হতো তাদের সঙ্গে। নারী ছিল ভোগের বস্তু। নিছক বিনোদনের উপকরণ। ছিল না ন্যূনতম অধিকার ও মর্যাদা। ইতিহাস বলছে— বর্বরতার যুগে, নারীদেরকে জীবন্ত হত্যা করা হতো। পুড়িয়ে মারা হতো। শত শত কন্যাসন্তানকে জীবন্ত হত্যা করা হয়েছে। ইউরোপ আমেরিকাতেও নারীরা নিগৃহের শিকার ছিল এই কদিন আগেও। একমাত্র ইসলামই নারীকে সম্মান দিয়েছে। ইজ্জত সম্মান সম্ভ্রমের অধিকার দিয়েছে। বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছে। আজও যা স্বীকৃত ও সমাদৃত।
শুধু নারী হবার অপরাধে মানব সভ্যতার অবক্ষয় লগ্নে আমাদের পাশের দেশ ভারতেও কন্যা সন্তান হওয়ায় মাতৃগর্ভেই লাখও ভ্রুণকে যারা হত্যা করে। তারা আর যাই হোক, মানবতার বন্ধু হতে পারে না। এরাই নারীর শত্রু। এ থেকে প্রমাণ হয় যে, এরা এখনো নারী বিদ্বেষ লালন করে। নারী তার সত্ত্বা হিসেবে সম্মানীত এবং প্রসংশিত। আমরা নারী হিসেবে তাদেরকে খাটো করছি কখনও। কিন্তু নিজেকে বিকৃত করা। শুধু নামে ও বর্ণে অবয়বে নারী হিসেবে প্রকাশ করা– এ নিছক বোকামি ও হীনমন্যতা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে– এরা কখনো মাতৃত্ব লাভও করতে পারবে না। কৃত্রিম পুরুষ হওয়া ব্যক্তিও কখনো বাবা হতে পারবে না।
মনে রাখা উচিত, আমাদের সমাজে এখনো মানুষ পুত্র সন্তানের জন্য মরিয়া। সবার চাহিদা একটি পুত্র সন্তান। ঠিক তখন কী করে একজন পুরুষ নিজেকে নারী হিসেবে দাবি করে? নারী হিসেবে স্বীকৃতি চায়। নিজেকে নারী মনে করে!
এটা কীভাবে কী করে সম্ভব। নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে বড়ো শক্তিশালী একটি এজেন্ট। যাদের এজেন্ডা ও মিশন হচ্ছে মানসিক বিকারগস্ত হীনমন্য একটি জাতির আবির্ভাব ঘটানো। যারা না নারী! না পুরুষ! বরং তারা হচ্ছে হিজড়া সম্প্রদায়ের তৃতীয় ভার্সন। আকারে আকৃতিতে অবয়বে নারী বটে। তবে ভেতরে তারা পুরুষ।
এমনকি বগুড়ার আলোচিত ট্রান্স জেন্ডার এক নারীর খবর গণমাধ্যমে এসেছে— যখন তার চাচা আপন ভাইয়ের সম্পত্তির অংশ দাবি করেছেন। তখনই এই লোক নিজেকে নারী মানতে নারাজ। আবার সে পুরুষ হয়ে উঠতে চায়। এই ক্ষণিকের নারী। আবার স্বার্থের জন্য পুরুষ সাজা ।