মধুখালীতে একটি মন্দিরে আগুনের ঘটনার সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই মুসলিম শ্রমিক নিহত, বিজিবি মোতায়েন
ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাতে একটি মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে আহত করার পর, হাসপাতালে ২ জনের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সেখানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ লোকজনের হামলায় গুরুতর আহত আরো ৫ শ্রমিক স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
নিহত নির্মাণ শ্রমিক দুজন হলেন; মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২১) ও তার ভাই আশাদুল (১৫)।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাতে মন্দিরে অগুনের ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরুষ সদস্যরা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার জানান হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চপল্লী গ্রামের বারোয়ারী মন্দিরের কালী প্রতিমায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৭ শ্রমিককে অবরুদ্ধ করে রাখে।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, মন্দির থেকে ২০ গজ দূরে পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক তৈরি করছিলেন শ্রমিকরা। খবর পেয়ে মধুখালী থানার পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধ লোকজন তাদেরও অবরুদ্ধ করে রাখেন। ফরিদপুর জেলা সদর ও রাজবাড়ী জেলা পুলিশের সহযোগিতায় কয়েক ঘণ্টা পর অবরুদ্ধ কর্মকর্তাদের উদ্ধার করা হয়।
জেলা প্রশাসক বলেন, আহত অবস্থায় ৭ শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়; তাদের মধ্যে ৪ জন অচেতন ছিলেন। আহতদের মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ জন মারা যান।
তিনি আরো বলেন, ডুমাইন এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশের পাশাপাশি একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৩ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মোরশেদ আলম বলেন, শত শত মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয়। বিক্ষুব্ধ লোকজনের ছোড়া ইট পাটকেল এর আঘাতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।
এই ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানান পুলিশ সুপার। বলেন, “পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।” পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানান তিনি।
আহত শ্রমিক লিটন মোল্লা বলেন, “আগুন দেখার পর এলাকাবাসীর সঙ্গে আমরাও নেভানোর কাজে অংশ নেই। কিন্তু বিক্ষুব্ধ লোকজন শ্রমিকদের সন্দেহ করে হাত-পা বেঁধে গণপিটুনি দেয়। বিক্ষুব্ধ বিপুলসংখ্যক মানুষ লাঠি, রড, ইট দিয়ে মারপিট করা হয় আমাদের। এ সময় স্কুলটির দরজা-জানালা ভাঙচুর করা হয়।”
ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন বলেন, “মাগরিবের নামাজ পর আমি মাঠে বসেছিলাম। কিছু সময় পর, ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার অজিত বাবু আমাকে ফোন করেন। বলেন, আপনি দ্রুত আসুন। এখানে মন্দিরে আগুন দেয়া হয়েছে।”
চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন আরো বলেন, “আমি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যাই। দেখি হাজার হাজার মানুষ। আমি জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করি। দেখলাম যে পরিস্থিতি বেগতিক। আসলে প্রশাসন ছাড়া কোনোভাবেই পরিস্থিতি শান্ত করা সম্ভব নয়। আমি সরে গিয়ে প্রশাসনকে ফোন দিই, ইউএনওকে ফোন দিই। পরে প্রশাসনের লোকজন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।