চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের ফাঁদে অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় ০৬ সদস্য আটক চেতনা নাশক ঔষধ উদ্ধার
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ
বায়েজিদ জোয়ার্দার
চুয়াডাঙ্গা জেলায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ডুগডুগি, শিয়ালমারি পশুর হাট সহ মোট ১১টি পশুর হাট। ঈদ-উল-আযহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ডুগডুগি ,শিয়ালমারি, আলমডাঙ্গা সরোজগঞ্জ, পশুর হাট গুলো জমজমাট হয়ে ওঠে। পশুর হাট গুলো শুরু হওয়ার সাথে সাথেই প্রায় প্রতি বছরই অজ্ঞান পার্টির মলম পার্টি, প্রতারণা সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম দৌরাত্ম বেড়ে যায়। এছাড়াও পরিবহনগুলোতেও বাসের যাত্রীবেশী অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা টার্গেট করে সাধারণ যাত্রীদের অজ্ঞান করে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেওয়ার সংবাদও বিরল নয়।
গত ০৩ জুন ২০২৪ তারিখ গরু ক্রয়ের জন্য নগদ টাকাসহ নোয়াখালী জেলার সেনবাগ থানাধীন কেশারপাড়া গ্রামস্থ জিয়াউল হক ভূইয়া ও তার সহযোগী জসিম উদ্দিন দামুড়হুদা ডুগডুগি পশুহাটে আসে। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাদের টার্গেট করে গরু ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশ ধারণ করে সখ্যতা গড়ে তুলে এবং সু-কৌশলে চেতনা নাশক দ্রব্য মেশানো পান খাওয়া মাত্রই গরু ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন কিছুটা অচেতন হয়ে পড়লে অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা ভিকটিম জসিমের নিকটে থাকা গরু ক্রয়ের ১৮,০০,০০০/-টাকা নেওয়ার সময় পশু ব্যবসায়ী জিয়াউল হক সহ আশপাশের লোকজন অজ্ঞানপার্টি চক্রের সদস্য মোঃ বাচ্চু মাঝি কে গ্রেফতার করে। বর্ণিত ঘটনার বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার মামলা নং-০৪ তারিখ- ০৩ জুন ২০২৪ ধারা-৩২৮/৫১১/১০৯ পেনাল কোড রুজু হয়।
এই মামলার রুজুর পর চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান সাধারণ মানুষের ঈদ উদযাপনকে নির্বিঘ্ন ও উৎসব মুখর করতে এবং সাধারণ মানুষ যাতে অজ্ঞান পার্টি মলম পার্টি প্রতারক শ্রেণীর অপরাধীদের দ্বারা সর্বস্বান্ত না হয়। অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা বিরল নয়। কোন ধরনের জীবনহানি যাতে না ঘটে ইত্যাদি বিভিন্ন কার্যক্রম কে সামনে রেখে একটি নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছেন। নিরাপত্তা পরিকল্পনায় প্রতিটি পশুর হাটে, প্রতিটি বড় বড় শপিংমল, বাস স্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এলাকায় পোশাকধারী পুলিশের ডিউটির পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা পুলিশ নিয়োগ করে এসব অপরাধীদের ফাঁদ পেতে ধরার নির্দেশনা প্রদান করেন।
তাঁরই প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনা এবং পরামর্শক্রমে অজ্ঞান পার্টির এই চক্রকে গ্রেপ্তারে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা, জীবননগর থানা, দর্শনা এবং দামুড়হুদা থানাসহ চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের একাধিক টিম অভিযান পরিচালনা করতে থাকে এবং পুলিশ সুপার চুয়াডাঙ্গা নির্দেশনায় তাদেরকে হাতেনাতে গ্রেফতার এর উদ্দেশ্যে কৌশলে ফাঁদ পাতা হয়। এই ফাঁদে আটকা পড়ে অজ্ঞান পার্টি চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। এটা একটা সংঘবদ্ধ চক্র। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে টার্গেট ভিকটিম কে চেতনা নাশক প্রয়োগ করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। তদন্তকালে আমরা এই চক্রের বেশ কিছু নাম পেয়েছি তাদের চলমান কার্যক্রম মনিটর করা হচ্ছে। এই চক্রের সকল সদস্যকে আইনের আওতায় আনার জন্য সুষ্ঠ তদন্ত এবং গ্রেপ্তার অভিযান চলবে।জনগণের জান-মাল রক্ষায় চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ সর্বদা আপনাদের পাশে রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত অজ্ঞানপার্টির সদস্যদের নাম ও ঠিকানাঃ
১। মোঃ বাচ্চু মাঝি(৪৮), পিতা-মৃত কাশেম মাঝি, সাং-দক্ষিণ রাজাপুর, থানা-শরণখোলা, জেলা-বাগেরহাট।
২। মোঃ হাসেম আলী(৪৮), পিতা-মৃত গোলাপ মন্ডল, সাং-দুধপাতিলা, থানা-দামুড়হুদা, জেলা-চুয়াডাঙ্গা।
৩। মোঃ সালামত(৫৫), পিতা-মৃত রইচ উদ্দিন, সাং-ইশ্বরচন্দ্রপুর, থানা-দর্শনা, জেলা-চুয়াডাঙ্গা।
৪। মোঃ শাহাবুদ্দিন ওরফে শুকচাঁন(৩০), পিতা-মোঃ বিল্লাল হোসেন,সাং-বোয়ালমারি, থানা ও জেলা-চুয়াডাঙ্গা।
৫। মোঃ ইব্রাহিম ওরফে ইব্রা(৫০), পিতা-মোঃ ইসমাইল হোসেন, সাং-সন্তোষপুর, থানা-জীবননগর, জেলা-চুয়াডাঙ্গা।
৬। মোঃ আব্দুর রাজ্জাক(৪৭), পিতা-মোঃ নওশাদ মন্ডল, সাং-মৃগমারী, থানা-জীবননগর, জেলা-চুয়াডাঙ্গা।
উদ্ধারকৃত আলামতঃ
১। চেতনানাশক পাউডার
২। চেতনানাশক ঔষধ মিশ্রিত জুস।