বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষক জোটের কংগ্রেস অনুষ্ঠিত
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ
বায়েজিদ জোয়ার্দার
“জাগো কৃষক বাধো জোট” এই ¯েøাগ্রানকে বুকে ধারণ করে
অদ্য২২ জুন ২৪ ইং শনিবার সকাল ১০টায় বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষক জোটের কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।
কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষক জোটের পক্ষ থেকে লিখিত দাবিনামা উপস্থাপন করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষক জোটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুকিত জোয়ার্দার।
কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কৃষক জোটের দাবি :-
১. চুয়াডাঙ্গা জেলায় একটি মাটি পরীক্ষাগার স্থাপন করা।
সঠিকভাবে চাষাবাদের জন্য মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। তাই এগ্রিকালচার জোন হিসাবে পরিচিত চুয়াডাঙ্গা জেলায় জরুরী ভিত্তিতে একটি মাটি পরীক্ষাগার স্থাপন করা দরকার।
২. চুয়াডাঙ্গায় সবজি হিমাগার স্থাপন করা।
চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের এলাকায় সারা বছর প্রচুর পরিমানে বৈচিত্র্যময় সবজির আবাদ হয়ে থাকে। এই সব কাচা পণ্য ক্ষেত থেকে তোলার পর পরই বিক্রি অথবা সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করতে পারলে নষ্ট হয়ে যায়। তাই জরুরী ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গা জেলায় সবজি হিমাগার স্থাপন করা প্রয়োজন।
৩. ন্যায্য সেচ মুল্য নির্ধারন ও বাস্তবায়ন করা।
চাষাবাদের জন্য সারা বছর কৃষকদের প্রচুর পরিমানে সেচের প্রয়োজন হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ জনক বিষয় হলো, সরকার নির্ধারিত সেচমূল্যের বাস্তবায়ন না থাকায় সেচ পাম্প মালিকরা কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত উচ্চ হারে সেচ মূল্য আদায় করছে। ফলে একদিকে যেমন ফসলের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে অপরদিকে কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাই জরুরী ভিত্তিতে সরকারিভাবে ন্যায্য সেচ মুল্য নির্ধারন এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. পানির অপচয় রোধে পরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
জলবায়ুর সংকটজনিত প্রভাবের শিকার হওয়ার অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশের জলবায়ু সংক্রান্ত ঝুঁকির মধ্যে খরাও একটি উল্লেখ্যযোগ্য ঝুঁকি। অতিরিক্ত ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার, সেচ কাজে অত্যাধিক পানির অপচয়সহ নানা কারণে খরার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মারাত্মক খরা, দুর্ভিক্ষ এবং ফসলের উৎপাদনশীলতা হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে। ইজজও এর গবেষনা অনুযায়ী ১ কেজি ধান উৎপাদনের জন্য ১৮০০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়, কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কৃষকরা এর জন্য ৪৫০০ লিটারের বেশি পানি ব্যবহার করে। অপরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থাপনার ফলে ১ কেজি ধান উৎপাদনে ২৭০০ লিটার পানি অপচয় হচ্ছে। তাই ভূ-গর্ভস্থ পানির উত্তোলন কমাতে জিকে খালসহ উপযুক্ত স্থানীয় নদী, খাল, বিল ও জলাশয়গুলোকে পানির রিজার্ভার হিসাবে প্রস্তুত ও সেচকাজে ব্যবহার উপযোগী করার পাশাপাশি খরা প্রবণ চুয়াডাঙ্গা জেলায় পানির অপচয় রোধে পরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী।
৫. পণ্যের মোড়কে প্রকৃত বিক্রয় মূল্য লেখা।
অনেক কোম্পানীর বাজারজাতকৃত সার, বীজ, কীটনাশকসহ বিভিন্ন পণ্যের মোড়কে লিখিত মূল্য ও প্রকৃত বিক্রয় মূল্যের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য থাকে যে কারণে কৃষকরা প্রতিনিয়ত ঠকছে। কৃষি উপকরণের মোড়কে প্রকৃত বিক্রয় মূল্য লেখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬. ইউনিয়ন পর্যায়ে সার ডিলারের বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে সাব ডিলার নিয়োগ করা।
সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে সার ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে কৃষকের কাছে ভর্তূকি মূল্যে সার পৌছানোর ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ জনক হলেও সত্যি সব ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিলারের বিক্রয় কেন্দ্র নেই। অনেক দুর থেকে সার আনতে যেয়ে কৃষকদের অর্থ এবং সময় নষ্ট হয়। আবার অসাধু সার ডিলারদের কারণে অনেক এলাকার কৃষকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে প্রয়োজনীয় সার পায় না। তাই ইউনিয়ন পর্যায়ে সার ডিলারদের বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে সাব ডিলার নিয়োগের জোর দাবি তুলতে হবে।
৭. সরকারি প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার তথ্য উন্মুক্ত করা।
কৃষকরা সরকারি প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার তথ্য জানতে পারে না। তাই সাধারণ কৃষকরা সরকারি প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। সে কারণে সরকারি প্রণোদনাসহ কৃষি পরিসেবা বিষয়ক যাবতীয় তথ্য ইউনিয়ন পরিষদে টাঙানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৮ ফ্লেক্সিবল কৃষি ক্যালেন্ডার তৈরি
ভূপ্রকৃতি ও আবহাওয়ার কারণে একই ফসল চাষ বিভিন্ন অঞ্চলে জেলার আগে পরে হয়ে থাকে যেমন ধান ও ভুট্টা চাষ অন্যান্য এলাকার তুলনায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় এক থেকে দেড় মাস আগে হয় সেজন্য সরকারি প্রনোদনা সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এই এলাকার কৃষকেরা প্রয়োজনের সময় পায় না যার ফলে চাষাবাদ বাধাগ্রস্ত হয় এবং সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হয় তাই কৃষি টেকসই উন্নয়ন কৃষি ক্যালেন্ডার তৈরি এবং সেই অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি।
৯. শস্য বীমার ব্যবস্থা করা
অনেক দেশে কৃষি ও কৃষকের সুরক্ষা শস্য বীমার ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের দেশেও কৃষককে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে শস্য বীমা ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন কৃষি ও কৃষকের এই সব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানে আমরা আপনার কার্যকর উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি।
Leave a Reply