1. admin@muktijoddhatv.xyz : admin :
  2. mainadmin@muktijoddhatvonline.com : mainadmin :
বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২৮ অপরাহ্ন

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নড়াইলের কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম শাহ মোঃ আতিয়ুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক, মুক্তিযোদ্ধা টেলিভিশন
  • Update Time : শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৩
  • ২৪৭ Time View

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নড়াইলের কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম শাহ মোঃ আতিয়ুর রহমান। তার সুযোগ্য সন্তান মোঃ আসিফুর রহমান বাপ্পী,সহ সভাপতি,নড়াইল জেলা আওয়ামীলীগ ওনার জীবনী তুলে ধরেছেন।

মরহুম শাহ মো. আতিয়ুর রহমান

প্রাক্তন রাজনীতিবিদ
জন্ম: ৫ই মে, ১৯৩৯ মৃতু্: ২১শে জানুয়ারি, ২০১৮
বি.এ (অনার্স). এম.এ,
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মরহুম শাহ মো. আতিয়ুর রহমান একজন সদা হাস্যেজ্জল ও মিষ্টভাষী মানুষ ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে ছিলেন মূর্তপ্রতীক। ন্যায়-নীতির মানদণ্ডে ছিলেন আপোষহীন। ছাত্রজীবন থেকেই আমার বাবা ছিলেন একজন প্রতিবাদী মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণে অকুতোভয় সৈনিকদের সাহস জোগাতে সফল সংগঠক হিসেবে যার ভূমিকা ছিলো অসামান্য। আমৃত্যু আমার বাবা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বুকে ধারণ করে গেছেন।

শিক্ষা জীবন:

নড়াইল জেলার লোহাগাড়া থানার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন | আমার বাবার শিক্ষা জীবন শুরু হয় লাহুড়িয়ার হিন্দু পাড়া পাঠশালার ছাত্র হিসেবে। সেখানে বিভিন্ন হিন্দু ছেলে মেয়েদের মধ্যে আমার বাবা ছিলেন একমাত্র মুসলমান ছাত্র। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সেখানে লেখাপড়া করেন। তারপর লাহুড়িয়া হাফেজ আব্দুল করিম একাডেমিতে অষ্টম শ্রেণী শেষ করেন। এরপর যশোর জেলা স্কুুল থেকে ১৯৫৬ সালে কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে এসএসসি এবং যশোর ম. ম. কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট সম্পন্ন করেন। ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং কৃতিত্বের সাথে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী শেষ করেন। আমার পিতা একজন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন l

রাজনৈতিক জীবন:

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং প্রচন্ড দেশপ্রেম নিয়ে ছাত্রজীবনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগে যোগ দেন। ছাত্রলীগের জন্য আমার বাবা ছিলেন নিবেদিত প্রাণ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে বাবা ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরপর দুই বার ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে “সাধারণ সম্পাদক” পদে বিপুল ভোট এ নির্বাচিত হন। তৎকালীন উত্তাল সময়ে (১৯৬০-৬৩) পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের “যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক” এর দায়িত্ব অত্যন্ত সফলতার সাথে পালন করেন। উল্লেখ্য কমিটিতে সভাপতি ছিলেন বর্তমান স্পীকার শিরিন শারমিনের শ্রদ্ধেয় পিতা মরহুম রফিকুল্লাহ চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম শেখ ফজলুল হক মনি।

পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৫ পরবতী প্রেক্ষাপটে এবং আওয়ামী লীগ এর দুর্দিনে লোহাগাড়া তথা নড়াইল আওয়ামী লীগ কে পুনর্গঠন, মজবুত করে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ পরিণত করতে আমরণ শ্রম দিয়ে গেছেন l ১৯৮৩-২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নড়াইল জেলা শাখার সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

আন্দোলন ও সংগ্রাম:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের (ডাকসু) “সাধারণ সম্পাদক” এবং পূর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা এবং ৬৯’র গণ অভ্যূত্থানে আমার বাবা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন। উল্লেখ্য বিষয় হলো-১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থাপতি, বাঙালির মুক্তির মহান অগ্রদূত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর হত্যাকারীরা জাতীয় চার নেতা, তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদ সহ প্রমুখ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে আমার বাবাকেও কারারুদ্ধ করে । আমার বাবার অপরাধ তিনি বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ট সহচর ছিলেন। সুদীর্ঘ ৪৪ মাস বিনা অপরাধে কারা নির্যাতন ভোগ করেন। এ সময় তিনি রাজনৈতিক ভাবে নিগৃহীত হন। ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর জেল হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি জাতীয় চার নেতার সাথে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারা অন্তরীণ ছিলেন। এখানে উল্লেখ প্রয়াত ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং আমার বাবা একই কারা কক্ষে ৩রা নভেম্বর জেল হত্যার দিন পর্যন্ত এক সাথে ছিলেন l ১৯৭৫ পরবতী প্রেক্ষাপটে এবং আওয়ামী লীগ এর দুর্দিনে লোহাগাড়া তথা নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ কে পুনর্গঠন, মজবুত করে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ এ পরিণত করতে আমরণ শ্রম দিয়ে গেছেন l ১৯৮৩-২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নড়াইল জেলা শাখার সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

কর্মজীবন:

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান আমেরিকান দূতাবাসে যোগদানের মধ্যে দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এসময় গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সরবারহ করে বঙ্গবন্ধুকে জানাতেন। নির্বাহী উপদেষ্টা হিসেবে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন । স্বাধীন বাংলাদেশের স্থাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে আমার বাবাকে বাংলাদেশ সড়ক উন্নয়ন করপোরেশনের (BRTC) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন। ১৯৭৩-৭৫ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত সুনামের সহিত বাংলাদেশ সড়ক উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ৭৫’র কালো অধ্যায়ের পর থেকে ৯৬ পর্যন্ত তাকে অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হলে জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাবাকে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (BHBFC) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন। ১৯৯৮-২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

জনকল্যাণমুখী ও শিক্ষাক্ষেত্রে আমার বাবার অবদান:

আমার বাবা একজন পরোপকারী মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনায় ছিলো কিভাবে মানুষের উপকার করা যায়। সমাজে গরীব-নিপীড়িত মানুষকে নিয়ে কাজ করেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুর্দিনে তিনি নিবেদিত কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ততকালীন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের পরীক্ষিত সৈনিকদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন একটি এনজিও, যেখানে তিনি দীর্ঘ ২৩ বছর (১৯৮৬-২০০৮) ধরে ৩,০০০ হাজার আওয়ামী পরিবারের নেতা কর্মীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিলেন । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন তৎকালীন লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাচ্চু ভাই, বর্তমান লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সভাপতি মুন্সী আলাউদ্দিন ভাই, তৎক্ষালীন লোহাগড়া ছাত্রলীগ এর সভাপতি সৈয়দ আকরাম হোসেন আকিদুল ভাই, জয়পুর ইউনিয়ন এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান আকতার ভাই, লোহাগাড়া পৌর আওয়ামী লীগ এর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মহসিন মোল্লা ভাই, লাহুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামি লীগ এর প্রাক্তন সভাপতি আব্দুস সালাম শিকদার ভাই ও গোলাম রসুল ভাই, শালনাগার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এর পরীক্ষিত সৈনিক আক্কাস ভাই এবং গোলাম সোবহান ভাই, কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্ত ভাই, নড়াইল জেলা যুবলীগ এর প্রাক্তন আহবায়ক ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগ এর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাবুল সাহা সহ অগণিত আওয়ামী পরিবারের নির্যাতিত নেতা কর্মীবৃন্দ l

লাহুড়িয়া আজিজুর রহমান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় ও শাহ আতিয়ুর রহমান গণগ্রন্থগারের প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন আমার বাবা। এছাড়া তিনি বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন।

নড়াইল এর খেটে খাওয়া মানুষ, নড়াইল আওয়ামী লীগ এর সকল নেতা কর্মী তথা এই জনপদের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের প্রতি তাঁর অকুন্ঠ ভালবাসা, দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু প্রতি তার শ্রদ্ধা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তাঁর অবিচল আস্থা, দলের প্রতি তাঁর দায়িত্ব বোধ আমাকে সব সময় ভাবতে শেখায়, অনুপ্রাণিত করে, দেশপ্রেম এ উদ্বুদ্ধ করে l আমি আমার বাবা মরহুম শাহ মো. আতিয়ুর রহমান এর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি l মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন l আমীন l

বিনম্র শ্রদ্ধা l

এস. এম. আসিফুর রহমান (বাপ্পি)
সহ- সভাপতি
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ
নড়াইল জেলা শাখা

“Baba your guiding hand on my shoulder will remain with me forever.”

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss