মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মোঃ ওমর ফারুক খুলনা জেলার শ্রেষ্ঠ শ্রেণী শিক্ষক নির্বাচিত।
স্টাফ রিপোর্টার:
মোঃ ওমর ফারুক । সহকারী শিক্ষক (বাংলা), সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা। তিনি যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মশরহাটি গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর পিতা মরহুম নূর মোহাম্মদ শেখ ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের একজন বীর যোদ্ধা। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। তিনি ১৯৯৭ সালে এসএসসি এবং ১৯৯৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। অতঃপর সরকারি ব্রজলাল কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ (অনার্স)সহ এমএ (মাস্টার্স) এ উভয় পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণী সহ ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ২০১৪ ও ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে খুলনা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি এড ও এম এড পরীক্ষায় ও প্রথম শ্রেণী সহ উত্তীর্ণ হন। শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের মাঝে তাঁর রয়েছে সুখ্যাতি এবং বিপুল জনপ্রিয়তা। ২০১২ সালের ৭ জানুয়ারি তারিখে তিনি নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (বাংলা) হিসেবে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকতা শুরু করেন। এর পূর্বে তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে প্রায় চার বছর শিক্ষকতা করেন। যোগদানের পর পরই নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে নিজের ব্যক্তিত্ব ও পাঠদানের মাধ্যমে জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ২০১৪ শিক্ষাবর্ষে খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে বিএড ডিগ্রি অর্জনের লক্ষ্যে ভর্তি হয়ে সেখানে শিক্ষক ও সহপাঠী/ সহকর্মীদের মধ্যে নিজের অবস্থান জানান দেন। তিনি সে সময় কলেজ ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন। একই বছরের মাঝামাঝি তিনি নড়াইলে নতুন কারিকুলামের বিস্তরণ বিষয়ক প্রশিক্ষণের প্রধান প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করার সুযোগ লাভ করেন। খুলনা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে বিএড অধ্যায়নের সময় লেখাপড়া ও ছাত্র সংসদের জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নানা সহ শিক্ষা কার্যক্রমেও অত্যন্ত সফলতার দেখান। তিনি কলেজে বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় আবৃত্তি, কুরআন তেলাওয়াতে সাফল্যের পাশাপাশি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ বক্তা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থাকাকালীন তিনি শিক্ষক হিসেবে পেশাগত বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষক হিসেবে জীবন দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষক হিসাবে নড়াইলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অত্যন্ত সফলতার সাথে পরিচালনা করেন। ২০১৭ সালে তিনি আবেদনের প্রেক্ষিতে খুলনা মহানগরের ডিজিটাল স্কুল খ্যাত কেডিএ খানজাহান আলী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এ বদলি হয়ে আসেন। এখানেও সহকর্মী এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দশম শ্রেণীর শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে নতুন এ বিদ্যালয় থেকে তার হাত ধরে প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস সহ অত্যন্ত ঈর্ষণীয় ফলাফল করায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন। ২০২০ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (বাসমাশিস) এর খুলনা জেলার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি খুলনার ঐতিহ্যবাহী নারী শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন। এ বিদ্যালয়ে আসার পর থেকে বিদ্যালয়ের সকল ইতিবাচক কর্মকান্ডে তিনি তার স্বকীয়তার জানান দেন। জাতীয় দিবস সমূহে সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি বিদ্যালয় এর নানা সহ-শিক্ষা ক্রমিক কার্যাবলীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য অল্পদিনেই তিনি শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে তার অবস্থান সুদৃঢ় করতে সক্ষম হন। ২০২১ সালে নতুন কারিকুলামের ট্রাই আউট কার্যক্রমে প্রায় একাধিকবার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং সারাবছর সক্রিয় থেকে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ২০২২ সালে নতুন কারিকুলাম এর একজন দক্ষ মাস্টার ট্রেইনার হিসাবে দৌলতপুর, খালিশপুর ও খানজাহান আলী থানার বাংলা বিষয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অত্যন্ত সফলতার সাথে পরিচালনা করে সুনাম অর্জন করেন। উল্লেখ্য, তিনি সম্প্রতি গুণীশিক্ষক ও দক্ষ সংগঠক হিসেবে নড়াইলের ঘরামিঘর (একটি নজরুল চেতনার বাতিঘর) নামক সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা স্মারক গ্ৰহণ করেন এবং সংবর্ধিত হন। তিনি তাঁর কর্মতৎপরতার কারনে এবছর জানুয়ারিতে বিদ্যালয় এর বার্ষিকী শুকতারা’র সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হয়ে বার্ষিকী সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০১২ সাল থেকে তাঁর বীর পিতা মরহুম নূর মোহাম্মদ শেখ এর নামে যশোরের অভয়নগর উপজেলায় একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করে আসছেন। তিনি যশোরের ঐতিহ্যবাহী নওয়াপাড়া ইনস্টিটিউট এর আজীবন সদস্য। এবছর তাকে বিদ্যালয় এর পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ শ্রেণী শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩ এ প্রথমে থানা পর্যায়ে (খুলনা সদর) শ্রেষ্ঠ শ্রেণী শিক্ষক এবং পরবর্তীতে খুলনা জেলার শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ায় তিনি বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষিকা, সহকারী প্রধানশিক্ষিকাসহ অন্যান্য শিক্ষক-সহকর্মীদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। একই সাথে তিনি সম্মানিত বিচারকমণ্ডলী সহ থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (খুলনা সদর), জেলা শিক্ষা অফিসার (খুলনা), জেলা প্রশাসক খুলনা মহোদয়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), এবং জেলা ও থানা শিক্ষা অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। সর্বোপরি এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে তার এই অর্জনের জন্য তিনি মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি তাঁর পিতা-মাতা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। পরবর্তী প্রতিযোগিতায় ( অঞ্চল এবং জাতীয়) ভালো ফলাফলের জন্য তিনি সকল শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
Leave a Reply