জাতীয়করণের বৈষম্যর শিকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা
মোঃ মামুনুর রশিদ
স্টাফঃ রিপোর্টার
টেকসই উন্নয়ন মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।কিন্তু এদেশে সারা বছর শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন সময় তাদের দাবি আদায়ে লক্ষ্যে এই জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে।
এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৪মার্চ থেকে ২০মার্চ ২০২৩ খ্রিঃ দীর্ঘ ১৭দিন (৪১৫৯টি )বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে সংগঠনটি।
সংগঠনের পক্ষ থেকে আরোও বলা হয় একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সনে প্রায় ৩৭ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা ৯জানুয়ারি ২০১৩সনে ২৬ হাজার ১৯৩ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণার দেন। ঘোষণা কালীন সময়ে পরিসংখ্যান ভুলের কারণে ২৬হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ হলেও ৪১৫৯টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ থেকে বাদপড়ে যায়। সরকারে শেষ সময়ে এসে তারাও সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে একই সময়ে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস) সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণ লিয়াজুঁ ফোরামের মুখপাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করেন।
এবার শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী সর্ববৃহৎ শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি(BTA) মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে চলমান অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে এই ধারাবাহিকতা ১৪জুলাই তারা একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন এবং নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।তারা(১৬ জুলাই) থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি।
সংগঠনের সভাপতি মো. বজলুর রহমান বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। তাছাড়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বেতন স্কেলের এক ধাপ নিচে প্রদান করা হয়। উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে।
তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার আগেই অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। তাছাড়া কয়েক বছর ধরে কোনো প্রকার সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে। তাই অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট অফিস ঘেরাও করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল দাবি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ। গত ৮ মার্চে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১০ মার্চ সারা দেশের জেলা সদরে ও কেন্দ্রীয়ভাবে প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষক-কর্মচারীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল এবং জেলা প্রশাসক-বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। ১৪ মার্চে বেসরকারি সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালনসহ ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং জাতীয়করণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া বিগত অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে শিক্ষা বাজেটে বরাদ্দ কম রাখায় ১১ জুলাই থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস কিংবা যোগাযোগ না করায় আগামীকাল (শনিবার) থেকে সারা দেশের বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে এবং লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
শেখ কাওছার আহমেদের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বাবু রঞ্জিত কুমার সাহা, দাশগুপ্ত আশিষ কুমার, সহ সভাপতি আলী আসগর হাওলাদার ও বেগম নূরুন্নাহার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু জামিল মো. সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন, অর্থ সম্পাদক মোস্তফা জামান খান, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর হোসেন, সহ মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শাহানা বেগম, অধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক প্রমুখ।
Leave a Reply