পাটগ্রামে বোমা মেশিন দিয়ে অবৈধ ভাবে ভূ-গর্ভস্থ হতে বালু পাথর উত্তোলনের মহোৎসব
পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি :
সরকারি নির্দেশ অমান্য করে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেজার বোমা মেশিন দিয়ে মাটির গভীর তলদেশ থেকে চলছে পাথর ও বালু উত্তোলন। প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত চলে তোলার কাজ। ২০১০ সালে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সরকার আইনপাস করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এ উপজেলায় পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে প্রাকৃতিক ক্ষতির শঙ্কা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনের কতিপয় সদস্য মেশিন মালিকদের সাথে যোগসাজস করায় দেদারছে চলছে ১৫০-২০০ অধিক ড্রেজার মেশিন এ অবৈধ কার্যক্রম। প্রতি রাতে প্রত্যেক মেশিন মালিক লাইন নেওয়ার নামে ১০ হাজার টাকা করে প্রশাসনের কতিপয় সদস্যকে দেয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিরা দাবি করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাত হলেই উপজেলার বুড়িমারী, শ্রীরামপুর, পাটগ্রাম ও জোংড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কৃষি জমি, ধরলা, সানিয়াজান ও সিংগীমারী নদী জুড়ে বসানো হয় মেশিন আর মেশিন। ভূ-গর্ভস্থ থেকে লাখ লাখ টন পাথর ও বালু উত্তোলনে নদীগুলোর নাব্যতা এবং গতিপথ বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে এসব নদী নালায় পরিণত হয়েছে। শত শত একর আবাদি জমি নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সরকারি, আধা সরকারি ভবন, রেললাইন, বুড়িমারী স্থলবন্দর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেতু চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। পাথর ও বালু পরিবহনে নিযুক্ত ট্রলি ও ট্রাক চলাচলের কারণে উপজেলার আঞ্চলিক পাকা ও আধাপাকা সড়কসহ চলাচলের বিভিন্ন রাস্তা নষ্ট হয়ে শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর জানান। পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধে দ্রত কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এ উপজেলা থেকে বেশ ক’টি নদী হারিয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন অনেকে। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাথর উত্তোলনের গভীর খাদে পড়ে শিক্ষার্থীসহ ১০ থেকে ১৫ জন মারা গেছেন।
স্থানীয় একজন মেশিন মালিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘রাতে পাথর ও বালু তোলার জন্য মেশিন চালু করতে প্রশাসনের কতিপয় সদস্যকে ৮ থেকে ১০ হাজার করে টাকা দিতে হয়। না হলে গিয়ে মেশিন ও পাইপ ভেঙ্গে দেয়।’
স্থানীয় বুড়িমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, ‘মেশিন চালু হলে স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে তাঁরা উল্টো মেশিন মালিকদেরকে বলে দেয়। পরবর্তীতে মেশিন মালিকরা আমাদেরকে নানান ভয়-ভীতি ও হুমকি দেয়। প্রশাসন যদি নিষেধ করে তাহলে কেউ মেশিন চালানোর সাহস পাবে না। প্রশাসনেরই কিছু সদস্যের মধ্যে ভেজাল।’
বানিয়াডাঙ্গী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হুদা বলেন, কয়েক দিন ধরে ধরলা নদীতে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর। উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ফসলের ক্ষতিসহ আবাদি জমি ভেঙে যাচ্ছে।
এ নিয়ে কথা হলে পাটগ্রাম আদর্শ কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ সহর উদ্দিন জানান, ড্রেজার দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে জীববৈচিত্র্যে ব্যাপক ক্ষতি হয় ও বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়ে।
নাম প্রকাশ না করে এক ড্রেজারের মালিক বলেন, রাতে পাথর-বালু তোলার জন্য মেশিন চালু করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে মেশিন ও পাইপ ভেঙে দেন।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ সাংবাদিক দের বলেন, ‘এর কোনো সত্যতা নেই।
যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল ওয়াজেদ কালবেলা’কে বলেন, পাথর তোলার ড্রেজার বন্ধে অভিযান জোরদার করা হবে।
#গত কয়েকদিন আগে অবৈধভাবে ভোর রাতে বালু ও পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে।
১৮ আগস্ট ২০২৩ খ্রি.
Leave a Reply