নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের বড় বাধা মাধ্যমিকের সাথে প্রাথমিক শাখা সংযুক্ত থাকা, ডাবল শিফট নয়!
-মোঃ ওমর ফারুক
আমরা মাধ্যমিক পর্যায়ে কর্মরত শিক্ষক এবং শিক্ষক নেতৃত্ব অত্যন্ত উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠার সাথে লক্ষ্য করছি যে, অতি সাম্প্রতিককালে মাধ্যমিকের নতুন কারিকুলাম নিয়ে এই সেক্টরের বাইরের অংশীজন অতিমাত্রায় তৎপরতা দেখাচ্ছেন যা বিজ্ঞান এবং যুক্তিসঙ্গত নয় বলে মনে করি। বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নতুন কারিকুলাম নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক করেন! আবার আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের (শিক্ষা ক্যাডারের জনৈক প্রভাবশালী কর্মকর্তা) পরামর্শ মোতাবেক নতুন কারিকুলাম এর সফল বাস্তবায়নের জন্য নাকি ডাবল শিফট বিদ্যালয় সমূহ বন্ধের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক উইং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যাচ্ছেন মর্মে সংবাদ প্রকাশ পাচ্ছে; যা আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে!
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ডাবল শিফট স্কুল আজকে চালু হয়নি এবং এই স্কুল সমূহে প্রতি শিফটের জন্য আলাদা শিক্ষক প্যাটার্ন রয়েছে এবং সেখানে প্যাটার্ন অনুযায়ী আলাদা শিক্ষকই কর্মরত রয়েছেন। সুতরাং হুট করে সিদ্ধান্ত না নিয়ে এ বিষয়ে ফিল্ড সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষা কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ব্যাপক আলোচনা পর্যালোচনা এমনকি প্রয়োজনে গবেষণার করার পর তার ফলাফলের উপর নির্ভর করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
উল্লেখ্য,
রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে এবং ৬৪ জেলা শহরের দুইটি করে সরকারি স্কুলের পাশাপাশি স্বনামধন্য বেশ কিছু বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহে ডাবল শিফট চালু আছে। ডাবল শিফট বিদ্যালয়ের ২টি শিফটের জন্য প্যাটার্ন অনুযায়ী আলাদা আলাদা শিক্ষক কর্মরত থাকলেও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহের সাথে সংযুক্ত প্রাথমিক শ্রেণি সমূহের জন্য আলাদা কোনো শিক্ষক নেই!
নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক শিক্ষকদের দিয়ে প্রাথমিকের ক্লাস নেওয়ানোটা কি যৌক্তিক হবে?
তাছাড়া,
একজন শিক্ষক প্রস্তুতি সহ ক্লাস নিতে গেলে বিরতিহীন ছয়টি বা সাতটি ক্লাস নিলে তা কি ফলপ্রসূ ক্লাস হবে?
সংগত কারণেই মাধ্যমিক থেকে প্রাথমিকের শ্রেণি সমূহ ডিটাস্ট করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে সংযুক্ত করা জরুরি বলে মনে করি। আর এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাবে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।
একই সঙ্গে,
নতুন কারিকুলাম বিষয়ে হোক বা শিক্ষা বিষয়ক যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয় হোক, এই ফিল্ডের অভিজ্ঞ এবং নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক এবং শিক্ষাবিদদের যুক্ত করা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়াটা খুবই জরুরি বলে মনে করি। অন্যথায় জাতি সুদূরপ্রসারী ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারে! যা আমাদের কারো কাম্য হতে পারে না! মনে রাখতে হবে সবার আগে দেশ এবং দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক ভাবে গড়ে তোলা! তা না হলে দেশের জনগণ জনসম্পদের পরিবর্তে অদূর ভবিষ্যতে দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে!
আমরা দীর্ঘদিন ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন বিরাট সংখ্যক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেখভাল তথা তদারকি যথার্থভাবে হচ্ছে না বলে বিভিন্নভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছি। ২০১০ এর জাতীয় শিক্ষানীতি তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মোতাবেক মাধ্যমিকের জন্য একটি স্বতন্ত্র অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই বিরাট সেক্টর পরিচালনা করা খুবই কঠিন এবং অসম্ভব বলে মনে করি। একই ভাবে উচ্চ শিক্ষার জন্য আলাদা অধিদপ্তর হলে উচ্চশিক্ষায় গবেষণার যেমন সুযোগ বাড়বে তেমনি মাধ্যমিক শিক্ষায়ও গতি সঞ্চার হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
লেখক:
মোঃ ওমর ফারুক
সাংগঠনিক সম্পাদক
সরকারি মাধ্যমিক স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ)
কেন্দ্রীয় কমিটি।
ও
মূখপাত্র
স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি।
ইমেইল: omurfaruknghs12@gmail.com
মোবাইল নম্বর: ০১৭১৬৩৬৩১১০
Leave a Reply